বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত-সাইন্সল্যাব অবরোধ


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:১২ অপরাহ্ন, ২১শে অক্টোবর ২০২৪


বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত-সাইন্সল্যাব অবরোধ
ছবি: প্রতিনিধি

আল জুবায়ের: শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যে শিক্ষার মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং শিক্ষক, শ্রেণি, ল্যাব সংকট ও পড়াশোনার খরচ বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।


সবশেষ সমাধান না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন কলেজগুলের শিক্ষার্থীরা।


আরও পড়ুন: যৌন হয়রানির অভিযোগে বাকৃবি অধ্যাপককে শোকজ


সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা কলেজ থেকে একটি মিছিল বের হয়ে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে জমায়েত হয় শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখানে অবস্থান নেয় বাকি ছয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি মিরপুর সড়ক দিয়ে নীলক্ষেত মোড় অতিক্রম করে ইডেন মহিলা কলেজ প্রদক্ষিণ করে নীলক্ষেতে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতে অবস্থান করেন।


এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা: "অধিভুক্তি নাকি মুক্তি? মুক্তি মুক্তি', 'শিক্ষা নিয়ে বানিজ্য, মানি না মানবো না,' 'আর নয় দাসত্ব, হতে চাই স্বতন্ত্র', 'ঢাবির জায়গায় ঢাবি থাক, সাত কলেজ মুক্তি পাক', 'নিপিড়ন নাকি অধিকার? অধিকার অধিকার', 'প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না', 'টু জিরো টু ফোর, অ্যাফিলিয়েটেড নো মোর' 'আমার পরিচয় দিতে হবে, পড়ার টেবিলে যেতে হবে,' স্বাধীনভাবে বলতে চাই, 'আমার অধিকার ফেরত চাই।" 


শিক্ষার্থীরা জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের দাবি না মানা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা সড়ক থেকে নড়বেন না।


ঢাবি অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।


শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলেও উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়নি তেমন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাবে ভুগছেন তারা। 


এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, নেই সুনির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার, সিলেবাস নিয়ে ধোঁয়াশা, তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ত্রুটিযুক্ত ফল, রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া সহ নানা সমস্যা।


জানা যায়, ঢাবি হঠাৎ করে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে এসব কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। নতুন স্বাধীন দেশে ঢাবি প্রশাসনের এই ধরনের বৈষম্য আর চান না শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাবি থেকে সাত কলেজকে আলাদা করে নতুন স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জোর দাবি জানান কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।


ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের কাছে সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কারো থেকেই সাড়া না পেয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।


আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজে পাসের হার ৯৯.৮১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেলেন ৯৬৬ শিক্ষার্থী


সাত কলেজ সংস্কার প্রতিনিধিরা জানান, স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে তিনটি কর্মপরিকল্পনার দাবিতে নীলক্ষেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি।


এগুলো হলো: "সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে।"


"সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু মাত্র একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন।"


"সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।"


আরএক্স/