কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে সিগারেটের রমরমা ব্যবসা
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, ২৬শে অক্টোবর ২০২৪
বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার মত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও সিগারেটের চাহিদা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানগুলোতে মাসে বিক্রি হচ্ছে মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার সিগারেট। দোকানদাররা বলছেন, ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় সিগারেটের অধিকাংশ ভোক্তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে ধূমপানে আসক্ত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধূমপানে আসক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যাটাই তুলনামূলক বেশি। নতুন ব্যাচ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এছাড়া আবাসিক হলগুলোতে তুলনামূলকভাবে ধূমপানের ছড়াছড়ি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাস টেন থেকে সিগারেট খাওয়া শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে অভ্যাসে পরিণত হয়। এহন তিনবেলা সিগারেট ছাড়া চলে না। ভাত না খাইলেও তার চলে।
আরও পড়ুন: রাবির ৮ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু ২৬ ডিসেম্বর
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা সিগারেট খাওয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অবদান রাখছি। এর ফলে দেশের রাজস্ব খাতের বিপুল উন্নয়ন হচ্ছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটাও জানি। কিন্তু জীবন আর কতদিনের। যা হওয়ার তািই হবে।
ক্যাম্পাসের আশপাশে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন পাঁচটি, মসজিদের মোড় সংলগ্ন চারটি, ভিসির বাংলো সংলগ্ন একটি, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল সংলগ্ন একটি, শেখ হাসিনা হল সংলগ্ন তিনটি, দক্ষিণ মোর সংলগ্ন সাতটি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল সংলগ্ন দুইটি, কাজী নজরুল ইসলাম হল সংলগ্ন একটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন দুইটিসহ ক্যাম্পাসের আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় আরো ১০-১২টির মতো দোকান আছে যেগুলোতে নিয়মিত সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।
এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সায়মা স্টোরের মালিক ইউসুফ বলেন, প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার মত সিগারেট বিক্রি করি। আমার কাস্টমার বেশিরভাগই ভার্সিটির ছাত্ররা।
তিনি আরো বলেন, সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু আমার দোকানের পুঁজির একটা বড় অংশ এই সিগারেট। এটা বিক্রি না করলে ব্যবসা অনেক লসের মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন: রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
মসজিদ রোড় সংলগ্ন তাজান্না ভূইয়া কনফেকশনারি এন্ড ভেরাইটিজ স্টোরের মালিক কামরুজ্জামান ভূইয়া (কামরুল নামে পরিচিত) বলেন, আমিও দৈনিক ৪-৫ হাজার টাকার সিগারেট বিক্রি করি। প্রায় ৬০-৭০% সিগারেট ক্রেতা হচ্ছে ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তবে আমার কিছু শিক্ষক কাস্টমারও রয়েছেন।
ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকানগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে সিগারেট সরবরাহ করে। দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি এবং জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি দুটি সর্বাধিক পরিমাণ সিগারেট সরবরাহ করে।
ক্যাম্পাস এরিয়ার দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ এন্ড টোবাগ্যো কোম্পানির বিপণন কর্মকর্তা মো. শাহ-আলম মিয়া জানান, ক্যাম্পাসের আশেপাশের প্রায় ২০টার মতো দোকানে প্রতি মাসে ২০-২৫ লক্ষ টাকার সিগারেট সাপ্লাই দিয়ে থাকি।
এদিকে ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভায় তৎকালীন উপাচার্য প্রয়াত অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলার সভাপতিত্বকালে তিনি, পরিবেশ রক্ষা, উন্নত শিক্ষার সুষ্ঠু ধারা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধুমপানমুক্ত এবং রাজনীতিমুক্ত রাখার ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্তগুলো সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: পবিপ্রবির এনাটমি মিউজিয়ামে দেশের ‘দ্বিতীয়’ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কঙ্কাল
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্যাস্পাসে যেখানে-সেখানে প্রকাশ্যে ধূমপান করছে ধূমপায়ী শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্ত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, শহিদ মিনার, ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে সিগারেটের ধোঁয়ার আনাগোনা বেশি থাকে। ফলে ধূমপায়ীদের পাশাপাশি চরম স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছে অধূমপায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ধূমপানের স্বাস্থ্যঝুকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সহকারী প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটির কারণে শুরুতে শ্বাসকষ্ট বা কাঁশি এবং দীর্ঘ মেয়াদে গ্রহণের ফলে একপর্যায়ে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির সৃষ্টি করে। যারা ধূমপানরত কারো পাশে অবস্থান করে তাদের একদম জটিল সমস্যা না হলেও বিভিন্ন শ্বাসজনিত শারিরিক সমস্যা বা কাশি হতে পারে। এ সমস্যাগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের পরিত্রাণের জন্য ক্যাম্পাসে ধূমপানের অবাধ বিস্তার বন্ধ জরুরি।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান নিষিদ্ধ। এখন আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ক্যাম্পাসে ধূমপান কমিয়ে আনা যায়। আমরা পদ্ধতিগতভাবে সামনে অগ্রসর হচ্ছি, আশা করছি আমরা খুব শীগ্রই ক্যাম্পাস থেকে এটা বন্ধ করতে পারব।
এমএল/