সমুদ্র সৈকত শহর জুড়ে পর্যটকের ঢল
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:২৫ অপরাহ্ন, ১৭ই ডিসেম্বর ২০২৪
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সৈকতে কবিতা চত্তর থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা । যেখানে কবিতা চত্তর, শৈবাল পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, সী গাল পয়েন্ট, সুন্ধগা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্ট নামের ৭ টি এলাকায় ভাগ করা রয়েছে। আর সেই ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মঙ্গলবার সকালে দেখা যায় পর্যটকের ঢল, যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারের রামুতে বন্যহাতির আক্রমণে ১ ব্যক্তির মৃত্যু
বিজয় দিবসের ছুটিকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে এমন পরিস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটক সাগরের নীল জলরাশি আর বিস্তৃত বালিয়াড়ি সৈকতের ঘুরছেন নিজের মতো। সবখানে বইছে পর্যটকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ঢেউ, যেন প্রকৃতির সমুদ্রের কাছে জনসমুদ্রের মিলন মোহনা। সৈকতে বসানো কিটকটের কোনটিই খালি নেই। ঘুরতে আসা পর্যটকদের কেউ ঘোড়ায়, কেউ বিচ বাইকে চড়ে, কেউ বিস্তৃত সৈকতে ঘুরাঘুরি করে, আবার কেউ সাগরজলে জেটস্কিতে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছে। অনেকে যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ কাটাতে সাগরের শীতল লোনাজলে গোসলে মেতেছেন। আবার কেউ কেউ সৈকতে কিটকটে বসে উপভোগ করছেন শীতের মিষ্টি রোদের স্নিগ্ধ পরশ।
সৈকতে স্নানরত পর্যটকের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকারি সী সেইফ লাইফগার্ডের সহকারি ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর জানিয়েছেন, ‘রবিবার থেকে কক্সবাজারে বাড়তে থাকে পর্যটকের আগমন। সোমবার ও মঙ্গলবার তা ভরপুর হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত সৈকতের বিস্তৃত এলাকা। সাগরে গোসলে নামা বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সাড়ে ৫ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের সবগুলোতে ৯০ থেকে শতাভাগ বুকিং রয়েছে। যে হিসেবে কক্সবাজারে গড়ে দেড় লাখের অধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। যা জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
তিনি জানান, ভর পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষ। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কেউ এসেছেন সন্তানদের, কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার নিয়ে। ফলে পর্যটক আগমণে ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। সমিতির পক্ষে পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেন কোন পর্যটকের কাজ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে হয়রানী করা না হয় তার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।
তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের। তবু পর্যটকরা বলছেন, শীতে প্রকৃতি মোহনীয় অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগে অবসাদ কাটাতে সাগর নন্দিনী কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন। নির্বিঘ্নে ভ্রমণের উপলক্ষ উপভোগ করতে পেরে খুশি তারা। মানুষের চাপ থাকায় হয়তো একটু অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয়েছে রাজধানী ঢাকার মিরপুর থেকে আসা আজমী ফারুক নামের এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। তিনি জানান, বিজয় দিবেসের ছুটিতে স্বপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক ঘুরেছেন নিজেরে মতো। প্রকৃতি উপভোগে ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেছেন যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল।
কুমিল্লার সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল হুদা জানান, তাদের কয়েক বন্ধু মিলে স্বপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। তারা বুধবার সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাবেন। সাগর ভ্রমণে এস বার বার মুগ্ধ হন তারা।
সন্তানদের পরীক্ষা শেষে সমুদ্র ভ্রমণে আসবেন এমন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল খুলনার ব্যবসায়ী আয়াছ রহমানের। তিনি এক সপ্তাহ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণে থাকতে চান। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকত ছাড়া মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যাবো। দেখে আসবো ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ। চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ পল্লিও দেখার ইচ্ছা রয়েছে তার।
কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে লাখের বেশী পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৯০ শতাংশের বেশী কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক আগমনের এ চিত্র অব্যাহত থাকবে।
সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ টি জাহাজ চলাচলের জন্য অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত মতে ২ হাজারের বেশি পর্যটক নেয়া যাচ্ছে না। ফলে কখনও ৩ টি কখনও ২ টি জাহাজ দ্বীপে যাচ্ছে। বিজয় দিবস ঘিরে পর্যটকের চাপ রয়েছে। ফলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক পর্যটক ইচ্ছা থাকার পরও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ঝাউবাগান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ আটক ২
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের জৈষ্ঠ্য সহকারি পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে পুলিশ পর্যটকের নিরাপত্তার পাশাপাশি হয়রানি রোধে কাজ করছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। অভিযোগ আসলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি ঝর্ণা সহ অন্যান্য স্পটেও দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এসডি/