বাংলাদেশে টেকসই ই-মোবিলিটির ভবিষ্যৎ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সবুজ-টেকসই ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: ডিপিডিসি’র তারিকুল হক


Janobani

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, ২০শে ডিসেম্বর ২০২৪


সবুজ-টেকসই ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: ডিপিডিসি’র তারিকুল হক
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন, চার্জিং অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সবুজ এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন, ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মোহাম্মদ তারিকুল হক। আন্তর্জাতিক কেস স্টাডি বাংলাদেশে ই-মোবিলিটির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। সরকার, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইভি গ্রহণকে আরো গতিশীল করা সম্ভব। চীনের ব্যাটারি প্রযুক্তি উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছে। গ্রিড ব্যবস্থার সাথে চার্জিং সময়সূচি সমন্বয় করে চীনের ইভি খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। আগামীতে বাংলাদেশকেও এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।


বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর রেনেসাঁ গুলশান হোটেল বাংলাদেশে টেকসই ই-মোবিলিটির ভবিষ্যৎ: একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানান তিনি। বাংলাদেশে টেকসই ই-মোবিলিটিতে উত্তরণ”এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি)-এর সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং এর টেকসই উন্নয়নের উপর মূল লক্ষ্য আলোকে করাই ছিল এই কর্মশালাটি জিআইজেড বাংলাদেশ পাওয়ার ডিভিশন এবং এমপিএমইআর এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।


আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংক থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে ১১৬ কোটি ডলার


ডিপিডিসি প্রধান প্রকৌশলী ( উন্নয়ন) মোহাম্মদ তারিকুল হক বলেন,বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি শিল্পে প্রায় ২৮ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৩ সালে বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন এবং চাকরির পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইটির মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ভার্জিনিয়া টেক এর এলিট বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। প্রথমে এই সম্মেলনের আয়োজকদের তার গবেষণাপত্র উপস্থাপনার সুযোগ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতের ইভি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থার টেকসই রূপান্তর সম্বব। যেখানে উদ্ভাবনী এবং টেকসই সমাধানগুলো কীভাবে সারা দেশে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের মাত্রা বায়ুর গুণমান সূচক এ ঢাকার বায়ুদূষণের বর্তমান অবস্থা তার কারণ ও প্রতিকার উঠে আসে। 


এছাড়াও চীন, ভারত, জাপান ও স্পেনের ইভি নীতিমালা ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বাংলাদেশের অবস্থার সাথে একটি তুলনামূলক আলোচনা করা প্রয়োজন। ঢাকায় বায়ু দূষণের চিত্র তুলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। চলতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পরপর ৬ দিন ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল। ইটভাটা, নিম্নমানের যানবাহন এবং খোলা স্থানে বর্জ্য পুড়ানো বায়ু দূষণের মূল কারণ। বার্ষিক গড় দূষণ স্তর ৮৩.৩ যুক্ত, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, চীনা কোম্পানিগুলো ব্যাটারি প্রযুক্তি উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছে। গ্রিড ব্যবস্থার সাথে চার্জিং সময়সূচি সমন্বয় করে চীনের ইভি খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে।


তিনি জানা, জাপানের ২০৫০ সালের মধ্যে সমস্ত যানবাহন ইভি-তে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য। ২০৩০ সালের মধ্যে ১,৫০,০০০ চার্জার স্থাপনের পরিকল্পনা। ভারতের ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ৩০ শতাংশ বাণিজ্যিক যানবাহনের ৭০শতাংশ এবং দুই চাকার যানবাহনের ৮০ শতাংশ ইভি-তে রূপান্তর করার লক্ষ্য। প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সাথে সহযোগিতা। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ইভি চার্জিং স্টেশন ও দক্ষ কারিগরি মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে। ভারতের আহমেদাবাদ, পাটনাতে ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশে ই-মোবিলিটির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। সরকার, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইভি গ্রহণকে আরো গতিশীল করা সম্ভব। এজন্য সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন, চার্জিং অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সবুজ এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের নীতিমালা পর্যায় একই থাকার সত্ত্বেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে আছে। কীভাবে এই খাতে বাধাসমূহ দূর করা সম্ভব হবে তা তুলে ধরেন। সভার উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্মসচিব, রিনিউব্যাল এনার্জির ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন।


আরও পড়ুন: সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি: ড. ইউনূস


তিনি বলেন, বাংলাদেশের রিনিউব্যাল এনার্জি ও ই-মোবিলিটি খাতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ প্রদান করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ডিপিডিসির রিনিউব্যাল এনার্জি বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো, জহিরুল করিম এবং ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মোহাম্মদ তারিকুল হক বাংলাদেশে টেকসই ভবিষ্যতের জন্য পরিবহনের রূপান্তর শীর্ষক উপস্থাপনা করেন। মো. জহিরুল করিম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, রিনিউব্যাল এনার্জি, ডিপিডিসি যিনি ডিপিডিসির রিনিউব্যাল এনার্জি বিভাগে ৩ বছর ধরে কর্মরত আছেন তিনি তার উপস্থাপনায় ই-মোবিলিটির পরিচিতি ও আর্থিক, পরিবেশগত সুবিধাসমূহ, বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যাল এর বর্ণনা, এবং চার্জিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বর্ণনা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের ইভি পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ সরকারের ইভি প্রসারের নীতিমালা বিষয়েও আলোকপাত করেন।


এ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, উন্নয়ন অনুবিভাগ কে.এম আলী রেজা,ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, যুগ্মসচিব, রিনিউব্যাল এনার্জি, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিপিডিসি, স্টোয়াঙ্কা স্টিচ, ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর এনার্জি এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জসহ ডিপিডিসি, পিজিসিবি, রোডস এন্ড হাইওয়ে এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


এমএল/