হারিয়ে যাচ্ছে জাবির অতিথি পাখি
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৪
এক সময় শীতকালে অতিথি পাখিদের কলরবে মুখর থাকত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। শীতের সোনামাখা রোদে পাখিদের অবাধ বিচরণ আর কিচিরমিচির শব্দে জাবি ক্যাম্পাস পাখি প্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল। তবে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, লেক ইজারা এবং প্রশাসনের উদাসীনতায় এই ঐতিহ্য দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে জাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
প্রতি বছর শীতের শুরু থেকে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে দেখা মিলত পরিযায়ী পাখিদের। তবে এবছর সেই দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতিথি পাখির সমাগম বলতে গেলে নেই বললেই চলে। নীরব লেক আর কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে পাখিদের সেই সরব উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ময়মনসিংহ থেকে পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থী নাঈমুল হক তরফদার বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি পাখির গল্প শুনে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম, তা হতাশাজনক। লেকগুলো নীরব, পাখি নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, লেকের ইজারা এবং পরিবেশ দূষণ পাখির সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ। তারা আরও বলেন, বেশ কিছু লেক অর্থের বিনিময়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারদের কীটনাশক ব্যবহার এবং লেক পরিষ্কার না করায় খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে পাখিরা। এছাড়া ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নির্মাণকাজ এবং গাছ কাটা পাখিদের বাসস্থানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ, যানবাহনের শব্দ, এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওয়াজ পাখিদের নিরাপত্তা ও মুক্ত বিচরণে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘পাখিরা প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল। ক্যাম্পাসে কোলাহল এবং ইট-কংক্রিটের পরিবেশ তাদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সময়মতো লেক সংস্কার এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন ছাড়া পাখি ফেরানো সম্ভব নয়।’
আরও পড়ুন: শীতের আগমনে জাবি ক্যাম্পাসে গ্রামীণ অনুভূতি
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে প্রথম অতিথি পাখি আসতে শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন ২০৬ প্রজাতির পাখির দেখা মিলত, যার মধ্যে ৮০টি ছিল বিদেশি। বর্তমানে এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
২০১৪ সালে সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য ঘোষণা করলেও বর্তমানে পরিস্থিতি তার উল্টো। পরিবেশের উন্নয়নে প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে জাবির অতিথি পাখির ঐতিহ্য পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডি/