ছুটির দিনে দর্শনার্থী সমাগমে প্রাণ পেল বাণিজ্যমেলা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:০১ অপরাহ্ন, ১০ই জানুয়ারী ২০২৫


ছুটির দিনে দর্শনার্থী সমাগমে প্রাণ পেল বাণিজ্যমেলা
ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েকদিন ধরেই বান্ধবীদের সঙ্গে মেলায় আসার প্ল্যান করছিলাম। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনবো। সেজন্য আব্বুকেও বলেছিলাম বেশ কিছু টাকা দরকার, আর সঙ্গে গাড়িটাও। আব্বু আর না করেনি। তাইতো ছুটির দিন ও শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছি মেলায়। এখন মন মতো ঘুরবো, প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করবো। তারপর শেষ বিকেলের দিকে বাসায় ফিরবো। কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা লাবণী।


সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে (১০ জানুয়ারি) স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মিরপুর থেকে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।


তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য দিন মেলায় আসা হয়ে ওঠে না, অফিসসহ বিভিন্ন ব্যস্ততা থাকে। তাই পাঁচ বছরের মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আজ ছুটির দিনে এসেছি। সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করব। বাচ্চাটাকে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়াবো। সবশেষে আল্লাহ চাইলে সন্ধ্যায় নিজের মোটরসাইকেলে করে বাসার দিকে রওনা দিবো।


আরও পড়ুন: বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ


বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন মনজুরুল করিম। তিনি এসেছেন মা ও বোনের জন্য শীতের গরম কাপড়, বিশেষ করে কাশ্মীরি শাল কেনার জন্য।


তিনি বলেন, সারা সপ্তাহে অফিসের কাজে দম ফেলার ফুসরত থাকে না। এদিকে মা-বোনের জন্য ভালোমানের শালও কেনা দরকার। তাই ভাবলাম আজ যেহেতু শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন- তাই আজ যাওয়াটাই ভালো হবে। তাই চলে এলাম। তবে বেশ কয়েকটি দোকানঘুরে যা মনে হলো, দামটা একটু বেশিই। আরেকটু কম হলে ক্রেতারা সহজেই কিনতে পারবে।


মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। স্টলে-স্টলে চলছে হরেক রকমের অফার। কর্মীরা হাঁক-ডাকে তুলে ধরছেন নিজেদের পণ্যের দাম ও গুনাগুণ।


কথা হলো তেমনই একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ননস্টিক ফ্রাইপ্যান, ওভেনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র বিক্রি করছি। অফারও আছে। কিন্তু সেই অর্থে ক্রেতা একেবারেই নেই। অনেকে আসছেন, ঘুরে দেখছেন, দরদাম করছেন, আবার চলে যাচ্ছেন।


আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের ভাড়া নিয়ে সুখবর দিলো এনবিআর


সাইদ নামের এই বিক্রয়কর্মী আরও বলেন, আশা করছি জুমার নামাজের পর থেকে ক্রেতা সমাগম আরও কিছুটা বাড়বে। সেই সঙ্গে বেচাকেনাও বাড়বে।


মেলায় কসমেটিকস পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য দিন সেভাবে না জমলেও আজ ছুটির দিনে মেলা জমবে। তবে সেটা বিকেলের দিকে।


একই কথা জামা-কাপড় ব্যবসায়ী রহমত উল্লাহর মুখেও। তিনি বলেন, অনেক লোকসমাগম হবে আজ। কারণ, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এদিনে সবাই কমবেশি মেলায় আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তাই বেচাকেনাটাও অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশি হবে।


মেলার টিকিট কাউন্টারেও লক্ষ্য করে দেখা গেলো, দর্শনার্থীদের মোটামুটি ভিড়। সারিবদ্ধভাবে সবাই মেলায় প্রবেশের টিকিট কিনছেন। সেখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।


এক স্কুলছাত্রী বলেন, অন্যান্য দিন কোচিং ও ক্লাসের অনেক চাপ থাকে। চাইলেই সময় বের করা যায় না। তাই শুক্রবার ছুটির দিনে আসা। মেকাপের কিছু জিনিসপত্র কেনার ইচ্ছে আছে। এখন টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকবো। তারপর মনমতো কেনাকাটা করবো।


আরও পড়ুন: মেট্রোর দরজায় আটকা দুই নারী, অতঃপর যা ঘটল


এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন মেলায়।তিনি বলেন, ছেলে বায়না ধরেছিলো ছুটির দিনে মেলায় আসবে, কিছু কেনাকাটা করবে। তাই ছেলেকে নিয়ে এসেছি। এখন টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে প্রথমেই তার পছন্দের জিনিসপত্র কিনবো, তারপর বাপ-বেটা মিলে মেলা ঘুরে বিকেলের দিকে বাসায় যাবো।


এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ছুটির দিনে স্বাভাবিকভাবে লোকসমাগম বেশি হয়। তাই আজও লোকসমাগম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হবে।


প্রসঙ্গত, এবারের মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। বাকি ১১টি স্টল ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া—এই ৭ দেশের।


মাসব্যাপী এ মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারন হয়েছে ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।


এমএল/