মিরসরাইয়ে মেলার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৫৮ অপরাহ্ন, ১৪ই জানুয়ারী ২০২৫


মিরসরাইয়ে মেলার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
ছবি: প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়ামে বাণিজ্যমেলার টিকিট বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারী দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে জাহেদ হোসেন মুন্না (২০) নামে এক ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নিহত হয়েছে। 


আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে লরি চাপায় প্রাণ গেল ৩ জনের


সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে । এসময় আরো বেশ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহতের ঘটনায় পরিবার বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ্য করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। রাতে তাৎক্ষণিক মিরসরাই থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অন্যতম সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান মিরসরাই পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসান ( ৩৭)সহ ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান করেছে।


গ্রেফতারকৃত অন্যান্য আসামীরা হলেন, কামরুল বাহিনীর সদস্য যুবদল কর্মী মো. নাজমুস সাকিব মারুফ (২২), মো. শাহ আলম (৪৭), মো. আরমান (২৬)। 


হামলা ও হতাহতের ঘটনার পরেও মেলা বন্ধের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন। এই নিয়ে মেলার অনুমোদন দাতা ডিসি কার্যালয় ও মিরসরাই উপজেলা প্রশাসনের সমালোচনায় মেতে উঠেছে নেটিজেনরা।


মেলায় হামলা ও হতাহতের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার পর মিরসরাই স্টেডিয়ামে বাণিজ্যমেলায় উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারী দুই সন্ত্রাসী গ্রুপ পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনের লোকজনের সঙ্গে পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসান বাহিনীর অনুসারীদের মধ্যে টিকিট বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে জাহেদ গ্রুপের লোকজন কামরুল বাহিনীর কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে মেলা স্থল ত্যাগ করে। ঘটনার জেরে কামরুল বাহিনীর লোকজন একত্রিত হয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় মেলা এলাকায়। 


পরবর্তীতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে রাত ১০টার দিকে কামরুলের অনুসারীরা মিরসরাই পোস্ট অফিসের সামনে অবস্থান নেয়া জাহিদ বাহিনীর উপর হামলা করে। এসময় জাহিদ বাহিনীর লোকজন টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পোস্ট অফিসের সামনে হামলার পর কামরুল বাহিনী ৫শ গজ দূরত্বে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহেদ বাহিনীর প্রধান জাহেদের বাড়িতে হামলা চালায় । জাহেদের বাড়িতে হামলা করে ফিরতি পথে মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার মুখে জাহেদ বাহিনীর অন্যতম সদস্য জাহেদ হোসেন মুন্না কে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার শরীর থেকে একটি পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।



মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে যারা ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য খুনাখুনি করে এরা এরা দলের আবর্জনা। এদের বিরুদ্ধে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে অনুরোধ করবো যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করে। 


উত্তর জেলা বিএনপির ৩ নং যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, ‘৫ আগষ্টের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী মিরসরাইয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিএনপি নেতা কর্মীদের হত্যায় মেতে উঠেছে। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমর্থন করে না। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে লুটপাট দখলবাজি ডাকাতি মারামারি হানাহানি ও হত্যার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দলিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনুরোধ করছি।


আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর


মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, নিহতের ঘটনায় ১১ জনের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানসহ ৪জনকে গ্রেফতার করে আদালাতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


এসডি/