সিরাজগঞ্জে হাটের নামে ব্যক্তি মালিকানার পুকুর দখলের অভিযোগ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:০৫ অপরাহ্ন, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিরাজগঞ্জে রাতের আঁধারে ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুর হাট কমিটির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখলের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া হাটের দক্ষিণপাশে আনোয়ার হোসেন তালুকদার গংয়ের স্বত্ব দখলীয় পুকুরে এই সাইনবোর্ড লাগানো হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এলাকার প্রভাবশালী বোরহান উদ্দিন তালুকদার ও তার সহযোগীরা রাতের আঁধারে এই সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী পুকুর মালিক আনোয়ার হোসেন।
ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন জানান, সদর উপজেলায় কালিয়া চৌধুরী মৌজায় দক্ষিণ পাশে ১.৪০ একর জমিসহ একটি পুকুর আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। পাকিস্তান আমল থেকেই দাদা, দাদার মৃত্যুর পর বাবা এরপর আমরা ভোগদখল করে আসছি। ওই পুকুরটি মৎস্যচাষীদের কাছে ৩ বছর ধরে লিজ দিয়ে আসছিলেন তারা। সম্প্রতি পুকুরটিতে মাছ চাষ করাবস্থায় কান্দাপাড়া গ্রামের বোরহান তালুকদারের নির্দেশে আমিনুল ইসলাম জাল নামিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে বাঁধা দিলে সেই সময় জাল তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুকুরটি দখলের জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। আর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরপরই সেখানে হাট কমিটির সাইনবোর্ড লাগানো হয়। সেই সাথে বোরহান তালুকদার ও আমিনুল পুকুরে না যাওয়ার জন্য মোবাইলে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। অভিযোগের পর সদর এ্যাসিল্যান্ড দু’পক্ষকে নোটিশ করে ডাকলেও বোরহান উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হননি বলে দাবী করেন তিনি।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে দেখে আসছি এই পুকুরটি আনোয়ারের বাবা হাতেম আলী তালুকদার ভোগদখল করে আসছিল। হঠাৎ করেই এখানে হাটের সাইনবোর্ড দেখে আমরাও অবাক হয়েছি। তবে কে বা কারা সাইনবোর্ড দিয়েছে তার নাম বলতে চান না এলাকাবাসী।
এক বৃদ্ধ রিকশাচালক বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি এই জমি হাতেম তালুকদাররাই এই পুকুর ভোগদখল করে আসছে। এখন দেখছি হাটের নামে সাইনবোর্ড। কে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান।
স্থানীয় আব্দুস সাত্তার, শাহজাহান আলী, নুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরেই হাতেম আলী ও তার ছেলে আনোয়ার তালুকদাররাই ভোগদখল করে আসছিল। হঠাৎ করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা সাইনবোর্ড টানিয়েছে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলেন, আমরা নাম বলতে পারবো না, তবে এলাকার সবাই জানে।
এ বিষয়ে বোরহান উদ্দিন তালুকদার বলেন, নকশা দেখলেই বুঝতে পারবেন পুকুরের বেশিরভাগ অংশই খাস। মাছ যে চাষ করে তার পূর্বপাশে দুইহাত জায়গা ওদের আরেকটি দাগে আছে। তারপরও তারা এতদিন ধরে খাস জমিতে সম্পূর্ণ মাছ চাষ করে আসছিল। আমরা কিছু বলি নাই। তারপরও ওদের ডাকলাম, জায়গাটা মাপ দেওয়ার জন্য। ওরা যে আবাদ করেছে টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বললাম। কিন্তু তারা আসে না। ওদের অনেক সময় দিলাম। এসিল্যান্ড অফিসে ডাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ ধরণের কোন নোটিশ পাইনি।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ( ভুমি ) আফিফান নজমু বলেন, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় শুনানির জন্য উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছিল কিন্তু সেই দিন অভিযোগকারী উপস্থিত হলেও অভিযুক্তরা কেউ উপস্থিত হননি। কেউ যাতে পুকুরটি জবর দখল না করে সে জন্য স্থানীয় তহসিলদারকে বলা হয়েছে এবং ঘটনাটি সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরএক্স/