কৃত্রিম প্রজনন প্রকল্প বদলে দিয়েছে প্রাণিসম্পদ সেক্টর


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫


কৃত্রিম প্রজনন প্রকল্প বদলে দিয়েছে প্রাণিসম্পদ সেক্টর
ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম প্রজনন ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রকল্প বদলে দিয়েছে প্রণিসম্পদ সেক্টর। গত কয়েক বছর ধরেই বিদেশ থেকে আর গরু আমদানী বন্ধ করেছে সরকার। মাংস ও দুধ উৎপাদনে মাইল ফলক সৃষ্টি হয়েছে।


১৯৭৩ সালে ১২৭টি হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় আনার মাধ্যমে দেশে কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি প্রবর্তনের সূচনা ঘটে। কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ভ্রুন স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০২-০৩ সালে হাতে নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যা বাস্তবায়ন করপ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।


প্রকল্পটির প্রথম ফেস সফলভাবে বাস্তবায়নের পর ২০০৯ সালে প্রকল্পেটির দ্বিতীয় ফেস অনুমোদিত দেয় সরকার। ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় ফেস বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত সফলতা পায় দেশবাসী। এ প্রকল্প দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশে এখন গরুসহ পশু উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানিও করা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: বিচার ও পুলিশ বিভাগের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল


এক দশক আগেও কোরবানিতে ভরসার অন্যতম জায়গা ছিল ভারত। কোটি পশু জবাইয়ে ভারত-মিয়ানমার থেকে আনা হতো গরু। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যকর পদক্ষেপে গরু আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। বাংলাদেশ গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গরুর মাংস রপ্তানিও শুরু করেছে৷ দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হিমায়িত গরুর মাংস দেশের বাইরে রপ্তানি করছে। সারাবছরই গরুসহ গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও গবাদি পশু বিক্রির সবচেয়ে লাভজনক বাজার বিবেচনা করা হয় ঈদুল আজহার মৌসুমকে।


প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২০২১ সালে ৯০ লাখ, ২০২২ সালে ৯৯ লাখ, ২০২৩ সালে ১ কোটি ৪১ হাজার এবং ২০২৪ সালে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে।


প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক গরু কোরবানি হয়। গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে কোনো গরু আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। যার ফলে দেশীয় গরু দিয়ে ঈদুল আজহাসহ সারা বছরের মাংসের চাহিদা মিটাতে সক্ষমতা অর্জন করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।


প্রতিবছরই প্রয়োজনের অধিক সরবরাহ ছিলো। গরু ছাগলের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, দেশ এখন গরু-ছাগলে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ আর এই জায়গায় বড় ভূমিকা রেখেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পশুর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পটি গত জুনে শেষ হলেও এর সুফল মিলছে বছরের পর বছর ধরে।


আরও পড়ুন: চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আউটসোর্সিং কর্মীদের সড়ক অবরোধ


প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে আধুনিক কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সিমেন উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। খামারিদের কষ্ট লাঘবে ডিজিটালাইজেশন আনা হয়েছে প্রকল্পে। ফোন করলেই পাওয়া যায় কৃত্তিম প্রজনন সেবা। কৃত্তিম প্রজননের ফলে গরুর উৎপাদন সহজতর ও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের জনগণের দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করেও অর্জন করা যাচ্ছে বৈদেশিক মূল্য।


সিমেন উৎপাদনের জন্য ঢাকার সাভার, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে ৪টি ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। ডোরস্টেপস সেবার জন্য দক্ষ প্রজনন কর্মী তৈরি করতে ৬ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে হাজার হাজার প্রজনন কর্মী তৈরি করা হয়েছে।


৪ হাজার ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী তৈরি করা হয়েছে। সিমেন তৈরির জন্য দেশে চারটি ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। এসব ল্যাব থেকে বছরে ৪৭ লক্ষ সিমেন উৎপন্ন করা হচ্ছে। সারাদেশের গরুকে প্রজনন করাতে সরকারি সংস্থা ৬০ শতাংশ সিমেন উৎপাদন করছে। প্রকল্পের পক্ষ থেকে সিমেন ও প্রজনন সামগ্রী কর্মীর হাতে ধারাবাহিক ভাবে পৌঁছেদিতে ২১ জেলায় ২১টি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে।


গত ১০ বছরে মাংস ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছে দেশ। বিগত বছর গুলোতে আমদানি ছাড়াই প্রত্যেকটি কোরবানির হাটে ছিল দেশীয় গরুর প্রাচুর্য। যা প্রকল্পের অন্যতম বড় সফলতা বলে মনে করে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পুষ্টিসমৃদ্ধ উন্নত জাতি গঠন ও খামার স্থাপনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মূদ্রার্জনের মাধ্যমে উন্নতদেশ বিনির্মানে এই প্রকল্প তার সবটুকু দিয়ে কাজ করেছে বলে জানা যায়।


আরও পড়ুন: এখনই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব বলে জানিয়েছে সংস্কার কমিশন


এ বিষয়ে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ভ্রুন স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. জসিম উদ্দিন জনবাণীকে বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় গরুর সাথে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের সিমেন ব্যবহার করে দেশিগরুর মৌলিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে মাংস ও দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে।


এমএল/