নারী উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবী নারীমুক্তি কেন্দ্র’র নেত্রীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, ৮ই মার্চ ২০২৫

নারী নির্যাতন বন্ধে ‘কিছু’ করার না থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নারী উপদেষ্টাদের ক্ষমতা ছেড়ে সড়কে নামার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। একই সঙ্গে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ‘ব্যর্থতার’ দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানিয়েছে এই সংগঠনটি।
শনিবার (০৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক নারী সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি সীমা দত্ত এ আহ্বান জানান।
নারী উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে নারীদের জন্য কাজ করতেই চান, আর আপনারা যদি ক্ষমতায় বসে কিছু করতে না পারেন, তাহলে রাস্তায় নেমে আসুন। আপনারা ক্ষমতা ছাড়ুন, আপনারা বলুন যে, আপনারা ব্যর্থ। তাহলে আমরা অন্তত বলতে পারব, প্রচলিত ব্যবস্থায় আপনারা সফল হতে পারেননি।’
আরও পড়ুন: লালমাটিয়ায় তরুণীকে মারধরের প্রতিবাদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সমালোচনা করে সীমা দত্ত আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় বসে কী করছেন? তার কথায় আমরা প্রতিদিন তামাশা দেখি।’
সংগঠনের অর্থ সম্পাদক তৌফিকা লিজার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সুস্মিতা রায় সুপ্তি।
সীমা দত্ত বলেন, ‘৮ মার্চ নারীমুক্তির আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। নারীর ভোটাধিকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, উপযুক্ত বেতনের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়- ৮ মার্চ প্রতিবছর সে লড়াইকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আজও আমরা দেখছি নারী-পুরুষের সমঅধিকার-সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়নি। গণ-অভ্যুত্থনের পরবর্তী সময়ে এমন একটি নতুন দেশ আমরা আশা করেছিলাম, যেখানে নারীরা তার অধিকার পাবে। অভ্যুত্থানে নারীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে, সেখানে কোনো বিভাজন হয়নি, পোশাকের প্রশ্ন ওঠেনি। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন অজুহাতে নারীকে ঘরে বন্দি করার বিভিন্ন আয়োজন চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখেছি গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের কিভাবে বহিষ্কার করা হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মবের শিকার হলেন। এই প্রত্যেকটা অন্যায় নারীর সঙ্গে ঘটছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সারা দেশে নারীদের অবস্থা আমরা বুঝতেই পারছি।’
আরও পড়ুন: শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেলে আগুন, ৪ মরদেহ উদ্ধার
সীমা দত্ত বলেন, ‘আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এ বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। বাবা-মা চাইলে বিশেষ পরিস্থিতিতে আঠারোর কম বয়সে বিয়ে দিতে পারেন। নিরাপত্তার অভাবে বাবা-মায়েরা তার কন্যার লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ে দিচ্ছেন। ফলে মানুষ হিসেবে নারীর বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যেসব নারী কাজে নিযুক্ত আছেন তারা সমমজুরি পাচ্ছেন না। কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ না থাকায় অনেক নারী কাজ ছাড়তে বাধ্য হন।পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী নারীরা গুম, খুন, অপহরণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এসব ঘটনায় অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষের উভয়ের সম্মিলিত ভূমিকা প্রয়োজন। ফলে নারীমুক্তির লড়াই নারী পুরুষ উভয়ের। পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে- তার ঘরের বোনদের, মায়েদের এগিয়ে দিতে হবে।’
এমএল/