এনসিটিবির ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যা বললেন গাজী সালাউদ্দিন তানভীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫০ অপরাহ্ন, ১৩ই মার্চ ২০২৫

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে উত্তর দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীর। তিনি বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যদি এক পয়সারও লেনদেনের অভিযোগ প্রমানিত হয়, তাহলে আমি নিজের ইচ্ছায় এনসিপি থেকে পদত্যাগ করব। আইন অনুযায়ী শাস্তি মাথা পেতে নিব।’
ভুয়া ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সুনাম ক্ষুন্নের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহর আদালতে এসে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন তানভীর। মামলায় ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারকে আসামি করে ৫০০ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগ এনেছেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে আগামী রবিবার (১৬ মার্চ) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
আরও পড়ুন: দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল
এরপর কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গাজী সালাউদ্দিন তানভীর বলেন, এনসিটিবিতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপানো হয়। এর আগে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তাদের দোসর বন্ধু রাষ্ট্র থেকে খুবই নিম্ন মানের বই ছাপিয়ে নিয়ে আসতো। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে বাংলাদেশেই উন্নত মানের কাগজে বই ছাপানো হবে। যখন এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছিল। এসময়ে কিছু কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমাদের। তখন যেসমস্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছিল, সেই সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ি। সেখানে রাখাল রাহা নামে এক ব্যক্তি দায়িত্বে ছিলেন। তার সাথে আমার নাম ট্যাগ দিয়ে ৪০০ কোটি টাকার যে দুর্নীতির মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছিল সেটার বিরুদ্ধে আজকে সর্বপ্রথম যে পত্রিকা নিউজ করেছিল ঢাকা পোস্ট তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছি। ৫ আগস্টের পর জন আকাঙ্খার দল জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ অভিযোগ।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার সাথে আমার বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। সবকিছু সাচিবিক প্রক্রিয়ার করা হয়েছে। তিলকে তাল বানানো হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার কাগজ কেনা হয়েছে। অথচ বলা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা দূর্নীতি করা হয়েছে। এটা হাস্যকর। আমি একজন নাগরিক পার্টির একজন দ্বায়িত্বশীল হিসেবে আমার দ্বারা এ ধরনের কোন একটা কার্য সম্পাদন হবে এটা হতেই পারে না। যখনকার অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে তখন আমাদের দল গঠনই হয়নি। কিন্তু যেহেতু আমি দ্বায়িত্বে আছি তাই আমার দ্বায়বদ্ধতার জায়গা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে স্পষ্ট করতে চাই, আমিও মানহানির মামলা করেছি। বাংলাদেশের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও এব্যাপারে জানেন যে কিভাবে কি হয়েছে। কিভাবে সিন্ডিকেটের হাত থেকে পাঠ্যপুস্তক উদ্ধার করে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সবাই যেহেতু জানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও বলবো আপনার আপনাদের জায়গা থেকে প্রতিবেদন দিবেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই আমার বিরুদ্ধে যদি এক পয়সারও লেনদেনের অভিযোগ প্রমানিত হয়, তাহলে আমি নিজের ইচ্ছায় এনসিপি থেকে পদত্যাগ করবো। আইন অনুযায়ী শাস্তি মাথা পেতে নিবে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা-ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
সারাদেশে বই এখনো পায়নি প্রশ্নে গাজী সালাউদ্দিন তানভীর বলেন, এনসিটিবির বই দুর্নীতি চক্রে অনেকে জড়িত৷ সারা দেশের পরিস্থিতি হলো স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা দায়িত্বশীলরা এক ক্লাসে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলে হাজিরা খাতা না দেখেই ৪০ জন লিখে দেয়। এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১০-১৫ বই জমে যায়, পরে জেলা শিক্ষার অফিসারের কাছে এসে ১০-১৫ লাখ অতিরিক্ত বই জমে যাই। এরপর এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জড়িত। এই সব সিন্ডিকেটকে আমি ধরেছি। এনএসআই ও নানা সংস্থাদের সঙ্গে আমরা গিয়ে দেখেছি, ইনভল্ব হয়েছি। তখন কেউ আর কাজ করতে পারে না। আমরা হিসাব করে দেখেছি ৫ কোটি বই অতিরিক্ত। কিন্তু ছাত্রই নেই। এই বই তারা ছাপিয়ে সবখানে দিয়ে দিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন স্থানে বই এখনো পায়নি।
এদিকে মামলার আবেদনে গাজী সালাউদ্দিন তানভীর উল্লেখ করেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর মারাত্মক ভগ্নদশা ও নড়বড়ে পরিস্থিতির মধ্যে সালাউদ্দিন তানভীর দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে রাষ্ট্র সংস্কারের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য এবং ছাত্ররা যাতে দ্রুত মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক পায় তার জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ডা. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সহযোগিতার জন্য অভিযোগকারীকে (তানভীর) অনুরোধ করলে তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করে তাদের কাজকে গতিশীল ও তড়ান্বিত করেন।
এমএল/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল

শেখ হাসিনা-ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না: হাইকোর্ট

মাগুরার সেই শিশুর সব ছবি অপসারণ করতে হাইকোর্টের নির্দেশ
