লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত: সারজিস আলম


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, ২১শে মার্চ ২০২৫


লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত: সারজিস আলম
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে পুনরায় রাজনৈতিক ময়দানে ফেরানো প্রসঙ্গে ক্যান্টনমেন্টের পরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্ট দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।


শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ পর্যন্ত এ লড়াই চলমান থাকবে।


এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির থেকে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম? গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক।


আরও পড়ুন: বিচারের পরে জনগণ ক্ষমা করলে রাজনীতি করতে পারবে আ.লীগ: রিজভী


এদিকে, বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) গভীর রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড সোশ্যাল পেজে লেখেন, কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ‍’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন ও শেখ তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।


আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর আড়াইটায়। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।‍‍


আমাদের আরও বলা হয় যে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে মাঠে হাজির হবে। এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।


এর উত্তরে আমাদেরকে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক‍‍।


আরও পড়ুন: ওয়ার্ড প্রশাসক নিয়োগ জাতীয় নির্বাচনে পেছানোর চক্রান্তের অংশ: ইশরাক


আলোচনার এক পর্যায় বলি, যেই দল এখনও ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দেবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ‍’ ইলেকশন হবে না।


উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোন ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। পরে মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।


জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেক কিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কখনও এজেন্সি কখনও বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের ওপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।


আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের ওপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। বিভিন্নমুখি প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।


আরও পড়ুন: বিএনপির হাতে দেশে যত সংস্কার হয়েছে তা কারও হাত দিয়ে হয়নি: টুকু


জুলাইয়ের দিনগুলোতে জনগণের স্রোতে ক্যান্টনমেন্ট আর এজেন্সির সকল প্রেসক্রিপশন আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারবো।


আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দেবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোন সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।


এমএল/