ঈদের বাকি দুদিন, বকেয়া বেতনের আশায় শ্রম ভবনের সামনে হাজারো শ্রমিক


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:১৫ অপরাহ্ন, ২৯শে মার্চ ২০২৫


ঈদের বাকি দুদিন, বকেয়া বেতনের আশায় শ্রম ভবনের সামনে হাজারো শ্রমিক
ছবি: সংগৃহীত

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকার বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন গাজীপুরে টিএনজেড গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকের কেউ কেউ তিন মাস ও কেউ কেউ চার মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পাবেন কারখানা মালিকদের কাছে।


শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরেও শ্রমিকদের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বেতন বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করতে দেখা যায়।


ছয় বছর ধরে টিএনজেড গ্রুপের ফ্যাক্টরি অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন নার্গিস বেগম। অসুস্থ স্বামী, এক ছেলে ও শাশুড়ি নিয়ে তার পরিবার। তিন মাস ধরে পাচ্ছেন না বেতন। অসুস্থ স্বামীর ওষুধ কিনতে পারছেন না। সেই সাথে বাসাভাড়াও বাকি।


নার্গিস বেগম বলেন, তার স্বামীর ওষুধের জন্য প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে লাগে। সেটিও জোগাড় করতে পারছেন না। অনেকের কাছ থেকে ধার (ঋণ) নিয়েছেন, সেগুলো শোধ দিতে পারছেন না।


আরও পড়ুন: ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান


এক বছর তিন মাস ধরে টিএনজেড গ্রুপের ফ্যাক্টরি অপারেটর হিসেবে কাজ করেন সামছুন নাহার। তিনি বলেন, রবিবার (২৩ মার্চ) থেকে তারা এখানে আন্দোলন করছেন। তিন মাসের বকেয়া বেতন পাবেন। সাত রাত, সাত দিন তারা এই শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। কারও কোনো রকম আশ্বাস পাননি তারা।


ঈদে বাড়ি যাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাড়ি যাব কীভাবে, টাকা ছাড়া তো যাওয়া যাবে না। টাকা ছাড়া তো গাড়িতেও ওঠায় না।’




শ্রমিকদের আন্দোলনে হতাশ হয়ে বসে আছেন চম্পা আক্তার। ৯ বছর ধরে তিনিও এই একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ফ্যাক্টরিতে কাজের সুবাদে গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন পরিবার নিয়ে। স্বামী অটোরিকশা চালান। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনিও সাত দিন ধরে এই ভবনের সামনে বেতন–বোনাসের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি  করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাননি বলে জানান চম্পা আক্তার। কীভাবে ঈদ কাটাবেন কিংবা কীভাবে পরিবার চলবে, সেটি নিয়ে অনিশ্চিত তিনি।


ময়মনসিংহের নান্দাইল গ্রামের জোসনা আক্তার দুই ছেলেকে মায়ের কাছে বাড়িতে রেখে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। বেতন ছাড়া বাড়ি যাবেন না বলে জানান তিনি।


আরও পড়ুন: জাতীয় ঈদগাহের ঈদ জামাতে অংশ নিতে পারেন রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টা


তিন বছর দুই মাস ধরে টিএনজেড গ্রুপের কারখানায় কাজ করেন অনিতা রায়। তিনিও তিন মাসের বেতন এবং বোনাস পাবেন। পরিবার ছেড়ে সাত দিন ধরে বেতন–বোনাসের দাবিতে এই সড়কে অবস্থান তার।


এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আশ্বাস পাইনি। তবে এতটুকু জানতে পেরেছি, আজ শ্রমসচিব আমাদের সঙ্গে বসতে চান। সাত দিন ধরে শ্রমিকেরা বেতন–বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছেন। অথচ শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব দূরের কথা, কোনো কর্মকর্তাই এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা বা যোগাযোগ করেননি।’


মোশরেফা মিশু বলেন, ‘আমরা চাই শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন না দিলেও আপাতত এক মাসের বেতন ও বোনাস যাতে দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত শ্রমিকেরা বাড়িতে গিয়ে কোনো রকম ঈদ করতে পারবে। তবে লিখিত দিতে হবে দ্রুততার সাথে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের।’


এমএল/