ডিপিডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী’র অবহেলায় বিদ্যুতকর্মীর মৃত্যু
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, ১১ই এপ্রিল ২০২৫

রাজধানীর মগবাজারে নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলমের অবহেলায় বিদ্যুৎতায়িত হয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এক লাইনম্যানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তদন্তে দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ, অন্যটি ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিভাগের তিন সদস্যের কমিটিকে আগামী ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব ফারজানা খানম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে (স্মারক নং-২৭.০০.০০০০.০৮৮.২৭.০০১.২৪.১৫৩) এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড-এর এনওসিএস মগবাজার, ডিপিডিসি দপ্তরে সিএসএস এর মাধ্যমে কামরান হোসেন, লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বুধবার (০৯ এপ্রিল) বিকাল ৩.৩০ ঘটিকার সময় ১৫/১৫ পশ্চিম রামপুরা ঠিকানায় নতুন সার্ভিস তার সংযোগ প্রদানকালে এলটি লাইনে দুর্ঘটনাবশত তিনি বিদ্যুতায়িত হন এবং জ্ঞান হারিয়ে মই-এ ঝুলে থাকেন। জানা যায় যে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্ণিত বিষয়টি তদন্তের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ৩ অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. শরীফুল ইসলামকে আহবায়ক এবং ডিপিডিসির শামপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হানিফ উদ্দিন ও ঢাকার বাবিউবো নির্বাহী প্রকৌশলী, মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) তানভীর আহমেদকে সদস্য করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে কামরান হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তপূর্বক কারণ নির্ধারণসহ দায়ীদের চিহ্নিতকরণ এবং গৃহীতব্য ব্যবস্থার সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ৩ অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. শরীফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের কাগজ আজ আমি হাতে পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে দিব।
আরও পড়ুন: ডিপিডিসির নতুন এমডি নূর আহমদ
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠনের পর বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহবায়ক হলেন সিভিল ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন ম্যানেজার (এইচআর) মো. আশরাফ উদ্দিন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানিং সাউথের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিঃদাঃ) মো. রবিউল ইসলাম। কমিটিকে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অফিস আদেশ থেকে জানা যায়।
বুধবার ঘটনায় হাসপাতালে মৃত কামরানের পরিবার অভিযোগ করেছেন, কামরান তামিম ইন্টারন্যাশনালের হয়ে কাজ করছিলেন। বিকেলে মগবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলমের নির্দেশে তিনি মগবাজার এলাকায় কাজ করতে যান। লাইন বন্ধ না রেখে কাজ করানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত কামরানের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বহীনতায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎলাইন সচল থাকা অবস্থায় কামরানকে কাজ করতে বলা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী মাহে আলম ডিপিডিসি মুগদা ডিভিশনে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। গ্রাহকের নতুন সংযোগ প্রদান, মিটার টেম্পারিংসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিটারম্যান বলেন, আমাদের জীবনের দাম নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম স্যারের নির্দেশে কোনো প্রকার নিয়ম নীতি না মেনেই সংযোগ দেওয়া হয়। যেখানে ছিলো না কোনো প্রকার লাইনম্যানের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম।
ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, এক সিঙ্গেল ফেইজ বিদ্যুৎগ্রাহকের বাসায় থ্রি ফেইজ মিটার পরিবর্তন করতে গিয়েছিল কামরান। বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইন বন্ধ না করেই খুঁটিতে উঠে সঞ্চালন লাইনে গ্রাহকের তার পরিবর্তন করতে গিয়েই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে রামপুরার বেটার লাইফ হসপিটালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ডিভিশনের প্রকৌশলীরা জানান, কামরানের মরদেহ পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি ফরিদতপুর মধুখালী দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে যায় কামরানের স্বজনেরা।
আরও পড়ুন: ডিপিডিসির ইমরোজের সম্পদের খোঁজে দুদক
যোগাযোগ করা হলে মগবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন ব্যস্ত, এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।
এদিকে, বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নূর আহমদ জানান, ঘটনায় কারো দায়িত্বহীনতা থাকলে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে। কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয় ডিপিডিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, আমি বিষয়টি জানি না বলে এগিয়ে যান। কি হয়েছে এ বিষয় বিস্তারিত বলতে পারবে নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম। তিনি ঘটনা সব জানেন। কিভাবে মিটারম্যানের মৃত্যু হয়েছে। সে ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আরও পড়ুন: ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোমানের পদত্যাগ
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
এমএল/