ডিপিডিসির ইমরোজের সম্পদের খোঁজে দুদক
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৫

# ডিজিটাল পাওয়ারের ট্রান্সফরমার হলে ফাইল অনুমোদিত
# তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গন করেছে ডিপিডিসি
# এটা আইন পরিপন্থি
- ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
‘ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী’- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শিগগিরই তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত শনিবার দুদকের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র বলছে, সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ৫ আগস্টে তার ক্ষমতার উৎস পতিত হলেও তার অনিয়ম থেমে নেই। তার বিরুদ্ধে দৈনিক জনবাণী পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে সংস্থাটি। দুর্নীতি খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিপিডিসি। গত ১৮ মার্চ ডিপিডিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহিউল আলমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন ম্যানেজার আরমান হোসেন খন্দকার এবং শাহ মোহাম্মদ ওয়াহাব।
ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচআর) সোনামনি চাকমা দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেন। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে (ডিপিডিসি)’র বিতর্কিত সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলীর অনিয়ম তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ডিপিডিসি সূত্র বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের ঘনিষ্ঠ সহোচর হওয়ার সুবাদে ইমরোজের হাতে পুরো ডিপিডিসির নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। নড়াইলের বাসিন্দা হওয়ায় শেখরের সঙ্গে তার ছিল সখ্যতা, যা কাজে লাগিয়ে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের চাপ প্রয়োগ করে অবৈধ সুবিধা আদায় করতেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকদের ফাইল আটকে রেখে জোরপূর্বক তার কোম্পানি থেকে মালামাল ক্রয় করতে বাধ্য করা হতো। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ডিপিডিসিতে ইমরোজ আলীর কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ সাব-স্টেশন ব্যবসার সুযোগ পান না। নিম্নমানের হলেও তার কোম্পানির ট্রান্সফরমার ছাড়া কোনো ফাইল অনুমোদিত হয় না। অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতিতে দক্ষ এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী বলেন, ডিপিডিসিতে মানহীন ট্রান্সফরমারের কারণে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। আমরা জেনে-বুঝেও এসব মানহীন ট্রান্সফরমার বিদ্যুতের উচ্চচাপ সংযোগের গ্রাহককে নিতে বাধ্য করতাম। মানহীন এসব ট্রান্সফরমার সরবরাহ করার বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান এ প্রকৌশলী।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজরা বহুমাত্রিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলে আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। আর এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তারা অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী ডিপিডিসির কর্মী হিসেবে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ করতে পারেন না। এটা আইন পরিপন্থি। এটা ঘোরতর অন্যায় হয়েছে। এটা তিনি করতে পেরেছেন তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এবং দলীয় প্রভাবকে ব্যবহার করে। ডিপিডিসিতে তার পদ এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দুটির সংমিশ্রণে যে ক্ষমতা তার অপব্যবহার করে তিনি ডিপিডিসিতে তার নিজস্ব কোম্পানির পণ্য সরবরাহ করেছেন। এর মাধ্যমে তার যে বৈধ আয় তার সঙ্গে দৃশ্যত অসামঞ্জস্য সম্পদ অর্জন করেছেন। এটাও বহুমাত্রিক অপরাধের একটি। এর মাধ্যমে তিনি সরাসরি দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন। তিনি বলেন, সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী যত অবৈধ সম্পদ অর্জন সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে পাশাপাশি তার যে ক্ষমতার অপব্যবহার এসব অপরাধের কারণে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপরাধীদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছায়। জবাবদিহি না থাকায় এ ধরনের অপরাধ এরা অকপটে করতে পেরেছে; কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি এ ধরনের অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হয় তাহলে অন্যদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী’র মুঠোফোনে টানা দুদিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরপর জানতে চেয়ে বিষয়গুলো দিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।