কয়লা খনিতে এখনো ওবায়দুল কাদেরের দাপট
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৫শে মে ২০২৫

# আদালতের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা করে না বিসিএমসিএল এমডি সাইফুল ইসলাম
# টেন্ডার বাদে কাজ পেলেন কাদেরের ভাতিজা পরিচয়দানকারী আলমগীর
# ওপেন টেন্ডার করলে বিষয়টি ভালো হতো
আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী, পরিচালক (পরিকল্পনা), পেট্রোবাংলা
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি বাংলাদেশের একমাত্র বাস্তবায়িত কয়লা খনি। যেখানে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে অপার সম্ভবনার দ্বার। কিন্তু পদে পদে দুর্নীতির কারণে পিছিয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক এই সম্ভবনার দুয়ার। হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের দুর্নীতির থাবা এখনো বৃদ্ধমান কয়লা খনিতে। আর তার সহযোগিতা করে যাচ্ছেন খোদ বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার। ফ্যাসিবাদের দোসর সাইফুল কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই বহাল তবিয়তে ঘুষের দোকান খুলে বসেছেন। ওবায়দুল কাদেরের আশির্বাদে চেয়ায়ারে বসা এমডি এখনো কাজ দিয়ে যাচ্ছেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের। ওবায়দুল কাদেরের ভাতিজা ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেনের দাপট এখন কমেনি। অনেক আপত্তি এমনকি কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মূল্যবান স্ক্যাপ তার হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘুষের বিনিময়ে ৮০ কোটি টাকা মূল্যের স্ক্যাপ নামমাত্র মূল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখানে কোর্টের নিষেধাজ্ঞাকেও পাত্তা দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, বিপুল পরিমাণ ঘুষের বিনিময়ে সিডিউল বর্হিভূত মূল্যবান তামার তারও পাচার করার অভিযোগ উঠেছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে। কয়েক কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে মূল্যবান মালামাল পাচার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাইফুল ইসলাম সরকার ওই ঘুষের টাকা ক্যাশের মাধ্যমে নেওয়ার পাশাপাশি নিজ এলাকা বগুড়ার একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একাউন্টের মাধ্যমে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল ব্যাংক বগুড়া শাখার নিগাত সিমার হিসাব নম্বরে (১০১৪০০১৪৯৩৬৭০) ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দৈনিক জনবাণীর হাতে আসা একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ব্যাংকের পাশাপাশি নিকট আত্মীয় সুরুজ্জামান সরকার ও উজ্জল হোসেনের মাধ্যমে নগদ টাকা গ্রহণ করেন। কখনও কখনও নিজেই ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত তার বাসা এলাকার রেষ্টুরেন্টে বসে লেনদেন করেছেন। এক ছবিতে ব্যাংকের কাউন্টারের সামনে টাকা বুঝে নিচ্ছেন তার ঘনিষ্ঠ উজ্জল হোসেন। পরে লাল রঙের ওই ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
এমডির ঘনিষ্ট উজ্জল হোসেন (পিতা মোঃ রাজিব) বগুড়া সদর উপজেলার কর্নপুর গ্রামের বাসিন্দা। আর নিকটাত্মীয় সুরুজ্জামান সরকার বগুড়ার ফুলবাড়ি থানার মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সুরুজ্জামানকে (পিতাঃ আকবর আলী) সকলেই এমডির ভাই বলেই জানেন। তবে আপন ভাই নাকি চাচা কিংবা জ্যাঠার ছেলে সুত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।
ওবায়দুল কাদেরের ভাতিজা পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো আলমগীর হোসেন (পিতা- আব্দুল খালেক) চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার খাদেমপাড়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ওবায়দুল কাদেরের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে বলে বড়পুকুরিয়া স্থানীয়দের কাছে পরিচয় দিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের পুরো সময়টা জুড়ে ছিল তার রামরাজত্ব। তার ইশারা ছাড়া এমডি কোন কাজই করতেন না। অভিযোগে প্রকাশ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্ক্যাপ মালামাল হস্তান্তর না করতে ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয়। সেই নির্দেশনা অমান্য করে পরের দিনেই স্ক্যাপ সরবরাহ করেছেন সাইফুল ইসলাম সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এমডি সাইফুল ইসলাম ওবায়দুল কাদেরের আশির্বাদে এমডি চেয়ারে বসেন। ওবায়দুল কাদেরের প্রভাব খাটিয়ে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। সুধা সদনের ঘনিষ্ঠ মফিজুল ইসলাম এই সময়ে এসে টেন্ডার পায় কি করে। তাও আবার গোপন লিমিটেড টেন্ডারে।
স্ক্যাপ টেন্ডার দুর্নীতির বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অতীতে দেখা গেছে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সাইফুল ইসলাম সরকারের বিষয়ে অনেকটা উদার পেট্রোবাংলা। তাকে বহাল রেখেই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, আমরা তদন্ত করে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। এখানে লিমেটেড টেন্ডার করা হয়েছে, ওপেন টেন্ডার করলে বিষয়টি ভালো হতো। তবে বোর্ডে অনুমোদনের মাধ্যমে করেছে।
বিসিএমসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সরকারকে একাধিক দফায় ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি। এমনকি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে উত্তর পাওয়া যায়নি।
আরএক্স/