হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট ফ্যাসিবাদের দোসর ডিপিডিসি’র শফিকুল


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০৩:১০ অপরাহ্ন, ২৪শে মে ২০২৫


হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট ফ্যাসিবাদের দোসর ডিপিডিসি’র শফিকুল
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# নিজেকে রক্ষায় ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি’র তকমা লাগানোর চেষ্টা

# নিয়োগ পরীক্ষায় ৩য় হয়েও মোটা অঙ্কের টাকায় সচিবের সঙ্গে রফাদফা 

# অনিয়ম হলে আমার একার জন্য হয়নি 

- হাবিবুর রহমান, সাবেক সিনিয়র বিদ্যুৎ সচিব 

# কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে নয়

- ড. ইফতেখারুজ্জামান নির্বাহী পরিচালক,টিআইবি 


আওয়ামী লীগের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার বন্দনায় দিন-রাত ব্যস্ত থাকতেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম (আইডি-২২৫৮৮)। তেলবাজীর পুরস্কার স্বরূপ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে শেখ পরিবারের আশির্বাদে চাকরির পরীক্ষায় ৩য় স্থান হলেও সকলকে চমকে দিয়ে নিয়োগ পান শফিকুল। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া একটি অভিযোগপত্র সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) ছিলেন। কিন্তু প্রজেক্ট শেষ না করেই শেখ পরিবারের আস্থাভাজন হওয়ায় ডিপিডিসির পরিচালক পদে নিয়োগ পান। জানা গেছে, একটি চলমান প্রজেক্টের কাজ শেষ না করেই অন্য কোথাও নিয়োগ পাওয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আইন পরিপন্থি। কথিত আছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শত কোটি টাকা হরিলুট করে নসরুল হামিদ বিপু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শেখ পরিবারের আস্থাভাজন হয়ে ডিপিডিসিতে নিয়োগ নেন শফিকুল। নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা না পেতে শুধু সাবেক সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমানকেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন।


গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগ এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিপিডিসি’র পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গত ২৪ জানুয়ারি নিয়োগ কমিটির (পরিচালনা পর্ষদের সব পরিচালকগণ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত) সুপারিশের আলোকে নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) পদে কিউ.এম শফিকুল ইসলামকে প্রাথমিকভাবে যোগদানের তারিখ হতে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সচিব মাসুদা খাতুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির স্মারক নং ৮৭,৪০৪,৪০১,০২,০১,০০১,২০২৩,২৩০।


অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশনায় কিউ.এম শফিকুল ইসলামকে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ঢাকায় বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট, ব্যাংকে বিপুল পরিমান টাকা এবং নিজ গ্রামের বাড়ি রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। ইতোমধ্যে তিনি ডিপিডিসিতে তৈরী করেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ডিপিডিসির ডিএসএস ও সিএসএস ঠিকাদার নিয়োগ, গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিমালা ভঙ্গ করে সংযোগ প্রদান, বদলী বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এই কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তিনি তা ম্যানেজ করে ধামাচাপা নিয়ে দেন।


অপরদিকে দুদকে করা অপর এক অভিযোগে বলা হয়, বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশে বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান তাকে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি ডিপিডিসিতে টেন্ডার বাণিজ্য, বদলী, পদোন্নতি ও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওমীলীগের সুবিধা নেয়া ডিপিডিসির এই কর্মকর্তা নিজেকে রক্ষা করতে ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির তকমা লাগানোর চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আর এসব সংবাদ প্রকাশ করায় তার বিরাগভাজন হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।


এ ব্যাপারে জানতে কিউ.এম. শফিকুল ইসলামকে মুঠোফোন কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উল্টো তিনি প্রতিবেদককে লোক দিয়ে শাসিয়েছেন যাতে করে তার বিরুদ্ধে সংবাদ না করা হয়। 


এ ব্যাপারে সাবেক সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, আমাকে দোষারোপ করবেন না। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু স্যার যেভাবে বলেছেন, আমি সেই ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। সেখানে যদি লেনদেন হয় সেই বিষয় আমার কিছু করা নেই। নিয়োগে অনিয়ম হলে আমার একার জন্য হয়নি। 


এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি অনৈতিক, ক্ষমতার অপব্যবহারনির্ভর দুর্নীতি। 


তিনি বলেন, কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগগুলো দেওয়া হয়েছে কি না, যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না। তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। 


আরএক্স/