শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প উচ্চশিক্ষার আশায় আল রোবার অদম্য লড়াই


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:০২ অপরাহ্ন, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫


শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প উচ্চশিক্ষার আশায় আল রোবার অদম্য লড়াই
আশায় আল রোবার

ভাগলপুর গ্রামের সাধারণ ঘরের মেয়ে আল রোবা যেন আজ হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণার নাম। পরিবার, সমাজ, এমনকি সময়-সব কিছুর প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে যিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি আর অটুট মনোবল থাকলে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়।


আরও পড়ুন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে সিগারেটের রমরমা ব্যবসা


আল রোবা, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ভাগলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজীজের বড় মেয়ে। ২০২৩ সালে কাজী নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সে স্বপ্ন দেখে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। কিন্তু ২০২৪ সালের ভর্তি পরীক্ষাগুলো তার জন্য ছিল কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার শুরু। আশানুরূপ ফল না আসায় স্বপ্ন যেন ভেঙে পড়তে চেয়েছিল।


চারপাশে শুরু হয় সমালোচনা, কটূক্তি। এলাকার মানুষ বুঝাতে থাকে-মেয়েদের জন্য এত পড়াশোনা করিয়ে লাভ নেই, বরং বিয়েই হওয়া উচিত। এমনকি পরিবারের মানসিকতা নষ্টের জন্য বহিরাগত উপরও চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু আল রোবা দমে যাওয়ার মানুষ না। মায়ের উৎসাহ আর আত্মবিশ্বাসকে পাথেয় করে আবার শুরু করে কঠোর প্রস্তুতি। যুদ্ধে সহপাঠী, প্রিয়জন কাউকে পাশে না পেলেও সে নীরবেই যুদ্ধ চালিয়ে যায় বইয়ের পাতার সাথে। কিন্তু শর্ত ছিল, ‘হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, নয়তো বিয়ে করে শিক্ষাজীবনের ইতি।’


অবশেষে সেই যুদ্ধের ফল আসে-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায়। সে দেশের হাজারো মেধাবীর ভিড়ে অর্জন করে গর্বিত ১০১তম স্থান।


এই সাফল্য শুধু একটি মেয়ের জয় নয়, এটি একটি পরিবারের জয়, একটি সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া-যেখানে মনোবল, অধ্যবসায় আর মায়ের দোয়া থাকে, সেখানে শত প্রতিকূলতা হার মানতে বাধ্য। আল রুবার এই সাফল্য নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে অনেক পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের। সে আজ প্রমাণ করেছে, হার না মানার নামই হচ্ছে আল রুবা।


দৈনিক জনবাণীকে আল রোবা বলেন, আমার দ্বিতীয়বার চেষ্টার রাস্তাটি ছিল খুব সরু। কেউ ভরসা দেয় নি। আমাকে কেমন যেন একাকিত্ব গ্রাস করেছিল। তারপর হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম সব ছেড়ে আবার নতুন করে শুরু করবো। ভয় কাজ করতো মনে, যে আমি পারবো কিনা? তবে সেই ভয় দূর করে কৃষি গুচ্ছে পরীক্ষা দিলাম। চান্স না পাওয়ায় হতাশা আবার গ্রাস করতে চেয়েছে তবে নিজেকে হতাশ করিনি, ভেবেছি কষ্টের ফসল আল্লাহ্ দিবেন। 


আরও পড়ুন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাউজ টিউটরের একসাথে পদত্যাগ


ঠিক, তাই হয়েছে। আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। তাদের প্রতি অঢেল কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যারা পুরো সময়টায় আমাকে ভরসা দিয়েছে, আমাকে দিয়েই ভালো কিছু হবে। তাদেরকেও সম্মান জানাচ্ছি যারা পিছুটান দিয়ে আমাকে দমাতে চেয়েছে। হয়তো তারা পিছুটান না দিলে, পূর্ণশক্তি নিয়ে পড়ার মানসিকতা তৈরি হতো না।


এসডি/