ডিপিডিসির দুই প্রকৌশলীর কালো টাকার থাবা
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ০৭:১৮ অপরাহ্ন, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫

দুর্নীতি, অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহারের কত রূপ, তা দেখাচ্ছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের মগবাজার ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন ও বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম। বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ গড়ার পাশাপাশি অসাধু উপায়ে কামাচ্ছেন কাড়িকাড়ি টাকা। ক্ষমতার দাপটে কাউকেই যেন গ্রাহ্য করেন না। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না এই দাপুটে দুই প্রকৌশলী।
এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পত্র জমা পড়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে দায়িত্ব অবহেলার কারণে গত ৯ এপ্রিল বিকালে ১৫/১৫ পশ্চিম রামপুরায় নতুন সংযোগ প্রদানকালে এলটি লাইনে দুর্ঘটনাবশত বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান কামরান হোসেন। তিনি তামিম ইন্টারন্যাশনালের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তারা তিন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করেন। ক্ষমতার জোরে একদিন পরেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করান। আর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম।
ডিপিডিসি’র সূত্রে জানা যায়, ডিপিডিসি গঠিত তদন্ত কমিটি ওই দুর্ঘটনায় মগবাজার ডিভিশনের কোনো প্রকৌশলীকেই দায়ী করেননি। তাহলে এ দায় কার। কে নিবো এই মৃত্যুর দায়। ঠিকাদারের পক্ষ থেকে বলা হয়, লাইনম্যান সরাসরি নিয়ন্ত্র করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। আর পুরো ডিভিশন মনিটরিং করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। কোনো ভাবে এই দুই প্রকৌশলী দায় এড়াতে পারেন না। এদিকে নিহত বিদ্যুৎ কর্মীর পরিবারের খোঁজ খবর নেয়নি এই দুই প্রকৌশলী। তারা শুধু নিজেদের রক্ষায় আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দুর্নীতিবাজ কয়েকজন প্রকৌশলী। দুর্নীতি করেও কারিশমায় পার পেয়ে যাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম।
আরও পড়ুন: চক্রান্তের জালে ডিপিডিসির প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক
বিদ্যুৎ কর্মীদের সেপটি সরঞ্জামের টাকা হরিলুট: মগবাজার ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন ও বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম বিদ্যুৎ কর্মীদের সেপটি সরঞ্জামের টাকা হরিলুট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সূত্র বলা হয়, বিদ্যুৎ কর্মীদের সকল প্রকার সেপটি সরঞ্জাম প্রদান করা কোম্পানির দায়িত্ব। আর সেপটি সরঞ্জামের জন্য বরাদ্দ দেয় ডিপিডিসি। যেখানে বিদ্যুৎ কর্মীদের টুপি, বুট, বেল্টসহ নানা সরঞ্জাম বরাদ্দ থাকে। কিন্তু সরঞ্জাম ক্রয় না করে পুরো টাকায় ঠিকাদারের সঙ্গে ভাগভাগি করেন দুই প্রকৌশলী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিপিডিসির সিএসএস এর যে সকল বিদ্যুৎ কর্মী করে থাকেন তাদের মেয়াদেকাল থাকে ২ বছর। ডিপিডিসিতে কোন প্রকার দুর্ঘটনা এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটলে ডিপিডিসির এই অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মীদেরই দায়ী করা হয়। স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের উপর দায় চাপিয়ে পার পেয়ে যান। বিদ্যুৎকর্মী কামরান হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় চাকরি হারিয়েছে অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মী। স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীরা একই কাজ করে থাকেন তাহলে কেন শুধুমাত্র অস্থায়ী কর্মীরাই দায়ী হয় সেটা খতিয়ে দেখার আবেদন ভুক্তভোগিদের। যদি অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি সাময়িক বরখাস্ত কিংবা ওএসডিতে রাখা হয় তাহলে কেন স্থায়ী কর্মীদের কিছুই হয় না।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই দুর্নীতিবাজ যেই হউক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: অজ্ঞাত ক্ষমতায় বরখাস্তের পরদিনই বহাল ডিপিডিসি’র প্রকৌশলী নাসির
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের বের করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে গেলে দেশে সুশাসন থাকবে না।
# বিদ্যুৎ কর্মীদের সেপটি সরঞ্জামের টাকা হরিলুট
# টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না দাপুটে দুই প্রকৌশলী
দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত
-ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
-ড. ইকবাল মাহমুদ, সাবেক চেয়ারম্যান, দুদক
এমএল/