মাদকের টাকা জোগান দিতে শিশু সন্তান বিক্রি
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, ২৪শে জুন ২০২৫

মদকের টাকা জোগান দিতে দেড় মাস বয়সের এক পুত্র সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বাবার বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে শরীয়তপুর সদরের চরপালং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে অভিযোগ পেয়ে সদরের পালং মডেল থানার পুলিশ রাতে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার দাদা-দাদির হাতে তুলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল
সন্তান বিক্রি করা বাবার নাম ইব্রাহীম হাওলাদার। তিনি নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর এলাকার শওকত হাওলাদারের ছেলে। পরিবার নিয়ে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপালং এলাকায় ভাড়া করা বাসায় থাকেন। পুলিশের দাবী ও ওই শিশুর বাবার স্বীকারোক্তি মাদকের টাকা যোগাতে ঋন হয়ে পরেছিলেন। ওই ঋনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে শিশুটি কে ৩১ হাজার টাকায় প্রতিবেশি ইকবাল হোসেন ও মুক্তা দম্পতির কাছে বিক্রি করেছিলেন।
পালং মডেল থানা সূত্র জানায়,শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর এলাকার শওকত হাওলাদার বাস চালক। তার ছেলে ইব্রাহীম শরীয়তপুর শহরের একটি ওয়ার্কসপের শ্রমিক। পরিবার নিয়ে তারা জেলা শহরের চরপালং এলাকায় ভাড়া থাকেন।
ইব্রাহীম ও শ্রাবনী দম্পতির দুই বছরের এক মেয়ে ও দেড় মাস বয়সের এক ছেলে। ওই দম্পতি বিভিন্ন ভাবে মাদক বিক্রি ও সেবনের সাথে জরিয়ে পরেন। মাদকের টাকার জোগান দিতে গিয়ে তারা ঋন হয়ে পরেন। সোমবার দুপুরে তাদের দেড় মাস বয়সি শিশু পুত্রকে প্রতিবেশি ইকবাল হোসেন ও মুক্তা আক্তার দম্পতির কাছে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
পরে স্থানীয়রা বিষয়টি জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পালং মডেল থানার পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় শিশুকে উদ্ধার করে। ওই সময় ইব্রাহীম ও শ্রবনি সম্পতিকে আটক করেন। রাতে শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার ও দাদী ঝর্না বেগম থানায় মুছলেকা দিয়ে তাদের ছেলে ও পুত্রবধুকে ছারিয়ে আনেন।
ইব্রাহীম বলেন,আমি মাদক সেবন ও বিক্রি করতে গিয়ে ঋন হয়ে পরেছিলাম। ওই ঋন পরিশোধের টাকা পরিবারের কাছে চেয়েছিলাম। টাকা না পেয়ে ছেলেকে বিক্রি করার জন্য স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করেছি। তার সম্মতি পেয়ে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেই।
ইব্রাহীমের বাবা শওকত হাওলাদার বলেন,একজন বাবার সন্তান মাদক সেবনকারি হলে ওই বাবার দু:খ-কষ্টের শেষ থাকে না। ওর যন্ত্রনায় আমরা অতিষ্ট ছিলাম। সে তার সন্তাকে বিক্রি করে দিবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার নাতিকে বিক্রি করে দেয়ার খবর প্রতিবেশিদের কাছে শুনে পুলিশের সহায়তা নিয়ে নাতিকে উদ্ধার করেছি।
ইকবাল হোসেন বলেন,আমার তিন কন্যা সন্তান। স্ত্রী ছেলে সন্তানের জন্য আকুতি জানাত। ইব্রাহীম ও তার স্ত্রী তাদের ছেলেকে লালন-পালনের জন্য আমাদের কাছে দিতে রাজি হলে আমরা কিছু টাকা দিয়ে ওই শিশুকে নেই। পরবর্তিতে স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পুলিশের হাতে শিশুটিকে তুলে দিয়েছি।
আরও পড়ুন: পশু কোরবানি ছাড়াই শরীয়তপুরের ৩০ গ্রামে ঈদুল আজহা পালন
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন,একটি শিশুকে তারা বাবা-মা বিক্রি করে দিয়েছে জরুরী সেবার ৯৯৯ নম্বরে এমন অভিযোগ পাই। তারপর পুলিশ সন্ধ্যার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তিতে তাদের অভিভাবকরা মুছলেখা দিয়ে তাদের ছারিয়ে নিয়েছে। ওই শিশুর বাবা মাদকাসক্ত। তাই তিনি এমন কাজ করেছেন বলে পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। কোন পক্ষের লিখিত অভিযোগ না থাকায় মামলা করা হয়নি।
এসডি/