সংস্কারের যেসব প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৮ অপরাহ্ন, ৬ই জুলাই ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি।
রবিবার (৬ জুলাই) সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সামনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং নজরুল ইসলাম খান।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে যেমন জনগণের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে, তেমনি কিছু হতাশাও দেখা যাচ্ছে। তবে আমরা সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি আরও জানান, “এখন পর্যন্ত আমরা ৬টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি এবং কিছু প্রস্তাবে আমাদের দ্বিমত রয়েছে।”
বিএনপির সম্মতি দেওয়া প্রস্তাবসমূহ:
দুদক সংস্কার: ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টি প্রস্তাবে বিএনপি সম্মতি দিয়েছে। শুধুমাত্র ২৯ নম্বর সুপারিশে তারা আদালতের অনুমতির বিধান অব্যাহত রাখতে চেয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার: ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবে একমত হয়েছে এবং ৫টিতে আংশিক একমত। তবে, ১১টি প্রস্তাবে তারা একমত হয়নি, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রদেশ সৃষ্টি এবং পদোন্নতির বিষয়ে কিছু প্রস্তাব।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার: ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টি প্রস্তাবে একমত হয়েছে। ৯টিতে আংশিক একমত, এবং ১৮টিতে ভিন্নমত জানিয়েছে বিএনপি।
নির্বাচনী সংস্কার: ১৪১টি প্রস্তাবে সম্মতি জানানো হয়েছে এবং ১৪টি প্রস্তাবে আংশিক একমত হয়েছেন। ৬৪টি প্রস্তাবে বিএনপি ভিন্নমত সহ একমত হয়েছে, তবে তারা কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মত প্রকাশ করেছে।
সংবিধান সংস্কার: ১৩১টি সুপারিশের মধ্যে বেশিরভাগ প্রস্তাবে একমত হলেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং ৭০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে বিএনপি কিছু ছাড় দিয়েছে।
বিএনপির দ্বিমত ও উদ্বেগ: বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যেসব প্রস্তাবে আমরা দ্বিমত প্রকাশ করেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে এবং জনগণের স্বার্থে সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদী সুফল প্রশ্নবিদ্ধ।” বিশেষ করে, নির্বাচনী কমিশনের স্বাধীনতা এবং কিছু প্রস্তাব জাতীয় সংসদের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, যা দলের মতে, দেশের সাংবিধানিক স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কারের জন্য আমরা ছাড় দিয়েছি, তবে সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি এও জানান যে, জনগণের অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রত্যাশার কথা মাথায় রেখে সংস্কারের বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
বিএনপি জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে এবং তারা আলোচনায় সকল পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে চলবে। তবে, কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ ও সমঝোতা দরকার বলে মনে করছে বিএনপি।
আরএক্স/