পবিত্র জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬ আমল
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:১৮ অপরাহ্ন, ১৭ই জুলাই ২০২৫

মুসলমানদের কাছে জুমার দিন পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ অপরীসিম। হাদিসে এই দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা)
জুমার দিনে বিশেষ ৬ আমল
জুমার নামাজ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম হাদিস ২৩৩)
আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদের সালাত সর্বনিম্ন কত রাকাত পড়া যাবে?
হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন। (বোখারি, হাদিস ৮৮৩)
জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করার অনেক ফজিলত রয়েছে। গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া সওয়াবের। হজরত আউস বিন আউস সাকাফি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে। (আবু দাউদ, হাদিস ৩৪৫)
মসজিদে সবার আগে যাওয়া
শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আগে প্রবেশ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল...। (বোখারি, হাদিস ৮৪১) জুমার দিন দোয়া কবুল হয় জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ ১০৪৮)
আরও পড়ুন: যে ৪ হাদিসে পবিত্র জুমাবারের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ ১০৪৮)
সুরা কাহাফের ফজিলত
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না। (তারগিব ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)
দরুদ শরিফের ফজিলত
জুমার দিন রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা অনেক সাওয়াব। হজরত আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ ১০৪৭)
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার রাতে কি কি আমল করতে হয়
জুমার দিনের আমল
হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, জুমার দিনের কিছু কাজে সাওয়াব মিলে। যেমন, নখ কাটা, গায়ের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা, উত্তমরূপে গোসল করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হবে (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুমার দিন এসব আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
এমএল/