মাইলস্টোন ট্রাজেডি: শেষ বিদায়ে মেয়ের কফিনে বারবার চুমু খান বাবা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯:১৬ অপরাহ্ন, ২২শে জুলাই ২০২৫


মাইলস্টোন ট্রাজেডি: শেষ বিদায়ে মেয়ের কফিনে বারবার চুমু খান বাবা
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নাড়িছেঁড়া বুকের ধন মেহেনাজ আক্তার হুমায়রার (৯) চিরবিদায় মেনে নিতে পারছিলেন না মা-বাবা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা সুমি আক্তার। বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত নয়নে মেয়ের কফিনে বারবার চুমু খান বাবা দেলোয়ার হোসেন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তারা।


নিহত হুমায়রা সখীপুর উপজেলার হতেয়া ইউনিয়নের কেরানীপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন একমাত্র মেয়ে। দেলোয়ার হোসেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মা-বাবা প্রাণে বেঁচে গেলেও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রার মৃত্যু হয়।‌


সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।


আরও পড়ুন: মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত আবদুল্লাহ শামীমের দাফন সম্পুর্ন


পারিবার সূত্রে জানা গেছে, বিমান দুর্ঘটনায় হুমায়রার মৃত্যুর খবরটি সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন সন্ধ্যার পর বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন। রাত আড়াইটার দিকে হুমায়রার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ওই বাড়িতে কান্না ও আহাজারির শব্দে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হুমায়রার মৃত্যু যেন এলাকাবাসীও মেনে নিতে পারছেন না। হুমায়রার বাবা দেলোয়ার ও মা সুমি আক্তারের চোখের পানি যেন ফুরিয়ে গেছে।


নিহত হুমায়রার বাবা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি খিলক্ষেত থেকে যখন শুনতে পাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেছে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। আমি ভিডিও দেখে সঙ্গে সঙ্গে খিলক্ষেত শাখা থেকে উত্তরায় চলে আসি। প্রথমে আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না, পরে অনেক কষ্টে ভেতরে ঢুকে মেয়েকে খুঁজতে থাকি। আর দেখি বিমানটি আমার মেয়ের ক্লাসরুমেই বিধ্বস্ত হয়েছে। আমার প্রশ্ন একটাই, ঢাকা একটি ঘনবসতি শহর, এখানে কেন ফাইটার বিমান চালাতে হবে। সরকারের এমন অদূরদর্শী একটি সিদ্ধান্তের জন্য আজ আমি সন্তান হারা। আমার মতো শতাধিক মা-বাবা কান্না করছেন। তাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, মেয়েটা আমার কলিজার টুকরা ছিল। আজ থেকে আমি নিঃস্ব। আমার একটাই সন্তান। আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। আল্লাহ নিয়ে গেছে। আমি বাকরুদ্ধ। সরকার যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়। এতো বড় বাহিনী কীভাবে ন্যাক্কারজনক ভুল সিদ্ধান্ত নিলো।


আরও পড়ুন: বিমান বিধ্বস্তের ২০ ঘণ্টা পরেও খোঁজ মেলেনি আফসান ওহির মার


নিহত হুমায়রার খালু নাসির সিকদার বলেন, রাত আড়াইটায় হুমায়রার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।


মঙ্গলবার সকাল ৯টায় হতেয়া কেরানীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শিকদার মুহাম্মদ সবুর রেজাসহ স্থানীয় মুসুল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।


এমএল/