উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে যা করেছিলেন পাইলট তৌকির


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:১০ অপরাহ্ন, ২৬শে জুলাই ২০২৫


উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে যা করেছিলেন পাইলট তৌকির
পাইলট তৌকির। ফাইল ছবি।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার দিন সকালবেলা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির একটি চেক রাইডে অংশ নেন, যেটি ছিল একটি নির্ধারিত মিশন।  তার কমান্ডিং অফিসার নিজেই এই মিশনটির অনুমোদন দেন এবং পুরো ফ্লাইটটি তত্ত্বাবধান করেন। যখন দেখা গেছে, তৌকির ফিট, তখন তাকে সলো ট্রিপে পাঠানো হয়। এটি ছিল একটি পরীক্ষামূলক সলো ফ্লাইট, যেখানে তৌকির নিজে বিমান চালাচ্ছিলেন।


মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে শনিবার (২৬ জুলাই) এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম সানাউল হক একটি গণমাধ্যমে এসব এ কথা বলেন ।


তিনি জানান, কমান্ডিং অফিসার এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইটে সরাসরি উপস্থিত থাকেন। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল ইউনিটের পাশেই একটি মোবাইল ভ্যানে বসে তিনি রেডিওর মাধ্যমে পুরো ফ্লাইট পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ফ্লাইটটি পুরো সময় ভিজিবল (দৃশ্যমান) অবস্থায় ছিল এবং তৌকিরকে চোখে দেখা যাচ্ছিল।


তৌকির প্রথম এবং দ্বিতীয় রাউন্ড সফলভাবে শেষ করেন। তৃতীয় রাউন্ডে যখন তিনি উত্তরা বা টঙ্গীর দিক থেকে ফিরে আসছিলেন, তখনই প্রথম সমস্যা দেখা দেয়। ল্যান্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা না থাকলেও কমান্ডিং অফিসার দেখতে পান, বিমানটি ধীরে ধীরে উচ্চতা হারাচ্ছে। তিনি রেডিওতে তৌকিরকে সতর্ক করে বলেন, ‘চেক ইয়োর হাইট।’ তৌকির তখন ‘কপিড’ (রজার) বলে উত্তর দেন।


কিন্তু এরপর দেখা যায়, বিমানটি স্বাভাবিক হাইটে ফিরছে না; বরং আরও দ্রুত নিচে নামছে। বিষয়টি গুরুতর মনে করে কমান্ডিং অফিসার দুবার বলেন, ‘ইজেক্ট, ইজেক্ট।’ কিন্তু তৌকির আর কোনো উত্তর দেননি। সম্ভবত, তিনি তখন বিমানটি নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বশেষ চেষ্টা করছিলেন, যা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক পাইলটই রেডিও যোগাযোগের চেয়ে ককপিট নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগ দেন।


এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম সানাউল হক নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, এমন সময় পাইলট কখনোই আগে রেডিওতে উত্তর দেয় না; বরং বিমানকে সেফলি ফেরানোর চেষ্টা করে। তাই তৌকিরের কোনো গাফিলতি ছিল বলে মনে হয় না।



এই এফটি-৭ বিমানটি ২০১৩ সালে চীনে তৈরি। এটি পুরোনো বা ত্রুটিপূর্ণ বিমান নয়। যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলে কাউকে সলো ফ্লাইটে পাঠানো হয় না। তৌকিরও সম্পূর্ণ ফিট ছিলেন, তা-ই বলেই মিশনে অনুমোদন পেয়েছিলেন।



সানাউল হক বলেন, তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন বিমান নিয়ন্ত্রণে আনতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সম্ভব হয়নি, এবং এই দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এটি এক নির্মম দুর্ঘটনা, যা আমাদের সবার জন্য গভীর বেদনার।


সবশেষে সানাউল হক বলেন, তৌকিরকে আমরা একজন সাহসী ও দায়িত্বশীল পাইলট হিসেবে স্মরণ করব। এই ঘটনাকে তার ব্যর্থতা বলা উচিত নয় বরং এটি একটি নির্মম নিয়তি।



 এসডি/