আদম ও হাওয়া (আ.)-কে যেভাবে বিভ্রান্তিতে ফেলেছিল শয়তান
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭:৩৭ অপরাহ্ন, ২৬শে জুলাই ২০২৫

আমাদের আদি পিতা আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের আদেশ করলেন তাকে সিজদা করতে। ফেরেশতারা তাৎক্ষণিক আল্লাহর হুকুম পালন করলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুম পালন করতে অস্বীকার করলো শয়তান। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করায় অভিশপ্তদের তালিকাভুক্ত হলো সে এবং মানুষের চরম শত্রুতে পরিণত হলো। এরপর থেকেই মানুষকে সরল সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত করার শপথ নিলো।
মহান আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর বসবাসের জন্য জান্নাতে পাঠালেন। নিঃসঙ্গতা কাটাতে সঙ্গী হিসেবে হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন। জান্নাতে একটি গাছের কাছে যেতে নিষেধ করলেন তাদের। আল্লাহর আদেশ মেনে তারা জান্নাতে বসবাস করতে লাগলেন।
এদিকে শয়তান আদম ও হাওয়া (আ.)-কে বিভ্রান্তিতে ফেলে সেই গাছের কাছে নেওয়ার এবং তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করার ফন্দি আঁটতে শুরু করলো। সে তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইলো, কিন্তু জান্নাতের প্রহরীরা তাদের বাধা প্রদান করলো।
আরও পড়ুন: আধ্যাত্মিকতা মানবজীবনে আত্মিক প্রশান্তি বাড়ায়
শয়তান জান্নাতে প্রবেশের জন্য সাপের সাহায্য নিলো। সাপের সঙ্গে শয়তানের পূর্ব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ইবলিশ তাকে বললো, তুমি তোমার মুখে করে আমাকে জান্নাতের ভেতরে নিয়ে যাও। সাপ রাজি হলো। শয়তান তার মুখে করে জান্নাতে প্রবেশ করলো। এই পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে জান্নাতের প্রহরীরা শয়তানের কারসাজি ধরতে পারলো না। এভাবে শয়তান জান্নাতে প্রবেশ করে আদম (আ.)-কে বিভ্রান্ত করলো।
অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে— আদম (আ.) কখনো কখনো জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। একদিন যখন তিনি জান্নাতের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন শয়তানের প্রবঞ্চনার শিকার হন।
আদম (আ.) বললেন, এই জান্নাতে যে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে পারবে, সে কতইনা সৌভাগ্যবান। শয়তান আদম ও হাওয়া (আ.) এর সামনে কান্না করতে শুরু করলো। তাঁরা তার কাছে কান্নার কারণ জানতে চাইলেন। তখন শয়তান বললো—
আমি তোমাদের জন্য কাঁদছি। কারণ, সামনে মৃত্যু এগিয়ে আসছে। তোমরা মারা যাবে আর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে। তবে তোমরা চিরস্থায়ীভাবে এখানে বসবাস করতে চাইলে আমার একটা পরামর্শ মানতে পারো। ওই যে গাছটি দেখছো এর ফল খেতে পারো।
আরও পড়ুন: পবিত্র জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬ আমল
আদম (আ.) বললেন, এই গাছ আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। ইবলিশ তখন আল্লাহর কসম খেয়ে বললো, আল্লাহর কসম আমি তোমাদের হিতাকাঙ্খী। আমি তোমাদের ক্ষতিকর কোনো পরামর্শ দেইনি।
ইবলিশের কসম শুনে তাদের মন কিছুটা বিভ্রান্ত হলো। ভাবলেন, কেউ তো আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করতে পারে না। হাওয়া (আ.) ইবলিশের কথায় প্রভাবিত হলেন। নিজে সেই গাছের ফল খেলেন এবং আদম (আ.)-কেও খাওয়ালেন।
শয়তানের ধোঁকায় বিভ্রান্তিতে পড়ে আল্লাহর হুকুম অমান্য করায় আল্লাহ তায়ালা তাদের জান্নাত থেকে বের করে দিলেন।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, একমাত্র ইবলিশ ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
আর আমি বললাম, ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং তা থেকে আহার কর স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীতে সর্বপ্রথম যে কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল
অতঃপর শয়তান তাদের জান্নাত থেকে স্খলিত করল। এবং তারা যাতে ছিল তা থেকে তাদের বের করে দিল, আর আমি বললাম, ‘তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। আর তোমাদের জন্য জমিনে রয়েছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবাস ও ভোগ-উপকরণ’। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৪-৩৬)
এমএল/