মেঘনা আলমের মোবাইল, ল্যাপটপে রাষ্ট্র বিরোধী উপাদান আছে কি না তদন্তের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৩ অপরাহ্ন, ২৯শে জুলাই ২০২৫

রাজধানীর ধানমণ্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপে রাষ্ট্র বিরোধী কোন উপাদান আছে কি না তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন সকাল ১১ টার দিকে নিজের পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ফেরত পেতে আদালতে হাজির হন মডেল মেঘনা আলম। এসময় মেঘনা হাতে খেজুরের কার্টুন ও জায়নামাজ হাতে নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় উঠেন। মিনিট দশেক পর
এই মামলার শুনানি হয়।
মেঘনা আলমের পক্ষে আইনজীবী মহিমা বাঁধন ও মহসিন রেজা আসামির জিনিসপত্র ফেরত চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, মেঘনা আলম একজন লিডারশিপ ট্রেইনার। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রায়ই তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়। এজন্য মেঘনা আলমের আইফোন-১৬ প্রো, ম্যাগবুক, অপো মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ খুব প্রয়োজন। এসব জিনিসপত্র ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয়ও সব কাগজপত্র দেওয়া যাবে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ এর বিরোধিতা করে শুনানিতে বলেন, আসামি বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধণাঢ্য ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। এই মামলাটি চাঞ্চল্যকর। আসামির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ দিয়ে কার কার সাথে যোগাযোগ করেছেন তা জানা দরকার। আরও কার কার সাথে ব্লাকমেইল করেছে, কাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন তা তদন্ত হয়ে আসা জরুরি। আসামির জিনিসপত্র ফেরতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ঘোর আপত্তি জানাচ্ছি।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মেঘনা আলম আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল। তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমি যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারব আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছিল তখন বিচারক তার উদ্দেশ্যে বলেন, এখন এটা আলোচনার বিষয় নয়।
এরপর মেঘনা আলম বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। ছয়টি মহাদেশের ১০ টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছি। এছাড়াও নারীদের অধিকার বিষয়ে অনেক কাজ করেছি। আমার ব্যবহৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত চাই।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তিনি নারীদের নিয়ে কি কাজ তা মামলার এজাহারে স্পষ্ট। তিনি মূলত নারীদের দিয়ে ব্লাকমেইল করতেন।
তখন মেঘনা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন। এরপর উভয় পক্ষ তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি নিরপরাধ।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মডেল মেঘনা আলমের জব্দকৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইলে রাষ্ট্র বিরোধী কোন উপাদান আছে কি তা তদন্তের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই-বাচাই করে আগামী ৩১ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ার সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধণাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানীর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপের নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের ফার্মের মালিক মর্মে চানা যায়।
এছাড়া ইতোপূর্বে মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিভিন্ন আকর্ষনীয়, স্মার্ট মেয়েদেরকে তার প্রতিষ্ঠানে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশী কুটনীতিক ও ধণাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে অসৎ উদ্দেশ্যে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় ও অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কুটনীতিককে টার্গেট করে ব্লাকমেইল করে বড় অংকের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করেন।
এর আগে, গত ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মডেল মেঘনা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তার ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল হয়েছিল। গত ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরবর্তীতে ২৮ এপ্রিল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আরএক্স/