মেট্রো নির্মাণ ব্যয় দ্বিগুণের আশঙ্কা, জাইকার সঙ্গে দর কষাকষিতে সরকার

ঢাকায় বর্তমানে আরও দুটি মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প চলমান, যার ব্যয় প্রাক্কলন করেছে সরকার ৯৩ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। এখন চলছে দরপত্র যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়নের কাজ। তবে ঋণদাতা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) নির্ধারিত শর্তে কেবল জাপানি প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট ভেঞ্চারই অংশ নিতে পেরেছে। এছাড়া দর প্রস্তাব বেশি হলে তা কমানোর জন্য দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের সুযোগও রাখা হয়নি।

এ সুযোগে জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে দর প্রস্তাব দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেল দুটি নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াতে পারে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা—যা সরকারের প্রাক্কলনের প্রায় দ্বিগুণ।

ব্যয় কমাতে ও দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক করতে জাইকার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

নতুন দুই মেট্রোরেল লাইনের একটি এমআরটি লাইন-১ (বিমানবন্দর-কমলাপুর ও নতুন বাজার-পূর্বাচল), যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। অন্যটি এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট) হেমায়েতপুর-ভাটারা, যার ব্যয় ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। দুটি প্রকল্পেই ডিপো নির্মাণ শুরু হয়েছে, মাঠপর্যায়ের কাজ শুরুর জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে।

ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র অনুযায়ী এমআরটি লাইন-১-এর ব্যয় ৯৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে এবং এমআরটি লাইন-৫-এর ব্যয়ও ৯০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে। ফলে কিলোমিটারপ্রতি খরচ দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি—যেখানে প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) উত্তরা-মতিঝিলের ব্যয় ছিল কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, লাইন-৬-ই বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল মেট্রোরেল প্রকল্প ছিল। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক অভিযোগ করে বলেন, জাপান সহজ শর্তে ঋণ দিলেও দরপত্রে নানা শর্ত দিয়ে প্রতিযোগিতা সীমিত করে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। তার মতে, জাপান যদি শর্ত শিথিল না করে, তাহলে এডিবি বা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়াই ভালো।

ডিএমটিসিএলের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য শহরে মেট্রোরেল নির্মাণের কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় অনেক কম—সিডনিতে ১,৭৪৭ কোটি, তুরস্কে ৬৭২ কোটি, আইভরিকোস্টে ৪৪৮ কোটি, সিউলে ৭৮৪ কোটি, ব্যাংককে ৭৪০ কোটি এবং হো চি মিন সিটিতে ১,৫৫২ কোটি টাকা।

ব্যয় কমানোর জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিনকে আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, শুধু জাইকা নয়, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর ঋণ নিয়েও প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, যাতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র নিশ্চিত হয়। জাইকার সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে এবং মূল লক্ষ্য সর্বনিম্ন খরচে মেট্রো নির্মাণ।

এসএ/