পাহাড়ের জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার বাঁশ কোড়ল


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৫০ পিএম, ২০শে আগস্ট ২০২৫


পাহাড়ের জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার বাঁশ কোড়ল
জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার বাঁশ কোড়ল।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের খুবই প্রিয় খাবার বাঁশ কোড়ল। এলাকার পর্যটকদের কাছে, এমনকি চট্টগ্রাম ঢাকাতেও দিন দিন সবজি ও বিভিন্ন খাবারের উপকরণ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি। পর্যটকদের চাহিদার কারণে হোটেল-রেস্টুরেন্টের মেনুতে জায়গা করে নিয়েছে বাঁশ কোড়ল।


পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনগোষ্ঠী বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবারের নাম ‘বাঁশ কোড়ল’ এটি একটি কাষ্ঠল চিরহরিৎ উদ্ভিদ। যার মূল থেকে বের হওয়া ছোট ছোট কচি অংশকে বলা হয় ‘বাঁশ কোড়ল’ (Bamboo shoots) যা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম।


পাহাড়ের গহিন অরন্যে প্রাকৃতিকভাবে ও নিজস্ব বাগানে পাহাড়ের ঢালুতে পরিচর্চাহীন অবস্থায় জন্ম নেয় বাঁশ । প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এসব বাঁশই তিন থেকে চার বছর পর পরিপূর্ণ বাঁশে পরিণত হয়ে কর্তন ও ব্যবহার উপযোগী হয়।


বাশঁ কোড়ল পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নানা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে একেক নামে পরিচিত, মারমাদের কাছে ‘মহ্ই’ আবার চাকমাদের কাছে ‘বাচ্ছুরি’, আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’ নামে ডাকা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সবজিটি বাজারে বেশি পরিমাণে দেখা যায়।


বর্তমানে বাঁশ কোড়ল পাহাড়িদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে তো পাওয়া যায়ই, ঢাকা চট্টগ্রাম পাহাড়ি রেস্টুরেন্ট গুলোতেও বাঁশ কোড়লে তৈরি সুস্বাদু বিভিন্ন খাবার খেতে আসেন নানা এলাকার মানুষ।


মুলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে স্বাদে অতুলনীয়। স্থানীয়দের কাছে কদর বেশী হওয়ায় বাজারে এটির দামও অন্যদের চেয়ে একটু বেশী থাকে।


বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত এই বাঁশ কোড়লের ভরা মৌসুম থাকে। এ সময় পাহাড়ের হাটবাজারগুলোতে প্রচুর বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। মাটি থেকে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। বাঁশে পরিণত হওয়ার আগে স্থানীয়রা বাঁশ গাছের গোড়া থেকে কচি অংশ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।


মাটিরাঙ্গা বাজারের বাঁশ কোড়ল বিক্রি করতে আসা চামেলী ত্রিপুরা  বলেন, ‘বাজার দিনে বাড়ির পাশে নিজের বাঁশ বাগান থেকে বাঁশ কোড়ল, কচুর মূখী, কলার বাকল সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসি। অনেক সময় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার বাঁশ কোড়ল ও অন্যান্য সবজি বিক্রি করি। ওই টাকাতেই সংসারের খরচ চলে।


অন্য এক বিক্রেতা বাশি চাকমা বলেন, বৃষ্টির সময়ে জঙ্গল থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর। অনেক সময় ক্রেতারা কিনতে চান না, ফলে কম দামেও বিক্রি করতে হয়। যে পরিমাণ পরিশ্রম করে বাজারে নিয়ে আসি সে পরিমাণে দাম পাওয়া যায় না।



নানা ধরণের সবজির মধ্যে ‘বাঁশ কোড়ল’কোনো অংশেই কম নয়। বরং, এর উপকারিতা অনেক। নিয়মিত বাঁশ কোড়ল খেলে মানবদেহের নানা রোগের  প্রতিষেধক হিসেবে এর কার্যকারিতা অপরিসীম।


পাহাড়ের জনপ্রিয় সবজি হলেও অপরিকল্পিত ভাবে বাঁশের কচি মূল গুলো কেটে ফেলার কারণে দিন দিন উজার হচ্ছে বাঁশঝাড়। ফলে বিলুপ্তের পথে পাহাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ।


এসডি/