মদের পর স্পিরিট উৎপাদন ও বিক্রিতে রেকর্ড কেরু’র


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মদের পর স্পিরিট উৎপাদন ও বিক্রিতে রেকর্ড কেরু’র

কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করলো স্পিরিট উৎপাদন ও বিক্রিতে। এ অর্থ বছর ডিস্টিলারী কারখানায় প্রায় ৩শ কোটি টাকার স্পিরিট বিক্রি হতে যাচ্ছে। দেশের ১৫ টি চিনিকলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৬ টি। বর্তমানে ৯ টি চিনিকল সচল আছে। সচল ৯টি চিনিকলের মধ্যে কেরুজ চিনিকল ছাড়া সবকটিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। কেরুজ চিনিকল এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে  খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের সুনামও অক্ষুণ্ন রেখেছে।  

কেরুজ চিনিকলের ৪টি বিভাগের মধ্যে চিনি কারখানায় মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হলেও তা পুষিয়ে নেওয়া হয় অন্যান্য বিভাগের মুনাফা অর্জন থেকে। এবার প্রতিষ্ঠাকালের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে দেশি মদ উৎপাদন ও বিক্রিতে। যে কারণে প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর ডিস্টিলারী বিভাগের লাভের অংকটা অনেক মোটা হতে চলেছে। 

তথ্যানুযায়ী গত ২০২০-২১ অর্থ বছরের ডিস্টিলারী বিভাগের স্পিরিটের সমাপনী মজুত ছিলো ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৯.২১ প্রুফ লিটার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মার্চ মাস পর্যন্ত স্পিরিট উৎপাদিত হয়েছে ৪০ লাখ ৫৯ হাজার প্রুফ লিটার। বিক্রয়ের ৫৫ লাখ প্রুফ লিটার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত মার্চ পর্যন্ত ৪২ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার বিক্রয় হয়েছে, যার অর্থমূল্য ২৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। ডিস্টিলারী বিভাগে সর্বোচ্চ স্পিরিট বিক্রির রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে এ বছর। চিনিকল কর্তৃপক্ষের ধারণা চলতি অর্থ বছরে অর্থাৎআগামী ২ মাসে  লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ লাখ প্রুফ লিটার স্পিরিট বিক্রি করা  সম্ভব হবে। হিসাব মতে ৩শ কোটিরও বেশি টাকার স্পিরিট বিক্রির রেকর্ড গড়তে পারে।  

মিলে গত অর্থ বছরে চিনি মজুত ছিল ৪৫০৯ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুমে ৫৩৬৯২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছে ৩০২৩.৫০ মেট্রিক টন। গত মরসুমের তুলনায় এ মরসুমে চিনি আহরণের গড় হার ছিল বেশি। গত মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ ৭৪ ও ৭৫ টাকা কেজি দরে ৪৮২৪.৮৫ মেট্রিক টন চিনি বিক্রি হয়েছে, য়ার অর্থমূল্য  প্রায় ৩৫ কোটি ৯৪ লাখ  টাকা। তবে আখচাষে কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে স্মরণকালের কম আখ মাড়াই হলেও রিকভারি বেশি হওয়ায়  চিনি কারখানার লোকসানের বোঝা গত মরসুমের তুলনায় কম হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 

কেরুজ বায়োফাটিলাইজার কারখানায় মার্চ পর্যন্ত জৈব সার উৎপাদন হয়েছে ১২০০ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরের সমাপনী  মজুত ছিল ৯২২.২২ মেট্রিক টন। সর্বমোট ২১২২.২২ মেট্রিক টন সারের মধ্যে ১৮১৭.১৫ মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে, যার অর্থমূল্য ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। চিনিকলের নিজস্ব খামারের জমিতে স্বল্প মেয়াদি ফসলসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য চাষের নিমিত্ত ৬ মাসের জন্য লিজ দেয়া হয়েছে সাতশত সাত একর। বিগত বছরের তুলনায় এবার সর্বোচ্চ দরে এ জমি লিজ দেয়ায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ১২ লাখ টাকা বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। 

এ দিকে করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে হ্যান্ড সেনিটাইজার উৎপাদন, যা চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন করা হয়ে থাকে। মার্চ পর্যন্ত ৬২২২ লিটার হ্যান্ড সেনিটাইজার উৎপাদন করে তা বিক্রি করেছে ৩১ লাখ ১১ হাজার টাকা। 

কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ কমপ্লেক্স। সর্বক্ষেত্রে কেরুজ চিনিকলের রয়েছে অবদান। সরকারের এ মূল্যবান সম্পদ গর্বিত ও সমৃদ্ধ করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা তথা দর্শনাকে। তাই এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যতম কাচামাল আখচাষ বাড়ানো খুবই জরুরী। কেরুজ কমপ্লেক্সে যে, যেখানে  যে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরকে নিষ্ঠা, আন্তরিকতার মধ্যদিয়ে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে চিনিকল কারখানা। 

এ মিলটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বর্তমান ব্যাবস্হপনা পরিচালক  মোহাম্মদ মোসারেফ হোসেন আখ চাষীদের সাথে বৈঠকসহ মিলটি আগামীতে কিভাবে ভালোভাবে পরিচালনা করা যায় তার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেরু'জ এ ডি এম প্রশাসন শেখ শাহাবুদ্দিন কেরুজ চিনিকলটি  কিভাবে লাভবান হবে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এসএ/