আদালতের মাধ্যমে সংসারে ফিরলেন তাঁরা, নিজ ঠিকানায় সন্তানরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আদালতের মাধ্যমে সংসারে ফিরলেন তাঁরা, নিজ ঠিকানায় সন্তানরা

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া এলাকার আকতারা-শাহানুর দীর্ঘ ১৭ বছরের সংসারজীবন অতিবাহিত করেছিলেন এই দম্পতি। এ সময়ে তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় তিন সন্তান। সংসারের ছোটখাটো কলহের জেরে ছয় মাস আগে ওই দম্পতির সংসারজীবনে ফাটল ধরে। রাগের বশবর্তী হয়ে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। দুই মেয়েকে নিয়ে আকতারা বানু বাবার বাসায় ফিরে যান। ছেলে রয়ে যায় বাবার সঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে ওই দম্পতির জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ, বিপাকে পড়ে তিন সন্তান।

জানা যায়, গত বছর অক্টোবর মাসে দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী আকতারা বানুকে (৩৬) তালাক দিয়েছিলেন স্বামী শাহানুর ইসলাম ওরফে নয়ন (৪২)। স্বামীর একক তালাকের কারণে ভেঙ্গে যায় এই দম্পতির ১৭ বছরের সংসার। বিপাকে পড়ে যায় তাদের দুই মেয়ে এক ছেলে। শাহনুর কৃষির পাশাপাশি নিজ বাসায় গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার।

এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে চলতি বছরের গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন স্ত্রী আকতারা বানু। মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করে আদালত। ওই মামলায় রবিবার (২৪ এপ্রিল) আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। ইচ্ছে ছিল আদালতেই বিয়ের দেনমোহরের ১ লাখ ১ হাজার পরিশোধ করে দিয়ে স্ত্রীর সাথে চিরস্থায়ী সম্পর্ক বিচ্ছেদ করবেন। এমনকি কারাগারে গেলেও ওই স্ত্রীর সাথে আর সংসার করবেন না সিদ্ধান্ত ছিলো এমন। 

তবে আদালতের এজলাসে উপস্থিত হলে ঘটে নাটকীয় ঘটনা। আদালতে অন্যদের সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের তিন সন্তানও। তিন সন্তানকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন স্বামী স্ত্রী উভয়ে। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তিন সন্তানের দিকে চেয়ে এই দম্পতিকে কলহ ভুলে সংসারে ফেরার পরামর্শ দেন। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনার এক পর্যায়ে দুজনেই সংসারে ফিরতে সম্মতি জানায়। বিকেলে বিচারকের খাস কামরায় মৌলানা ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের লোকজনের সম্মুখে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক ১ হাজার টাকা নগদ দেন মোহরানায় তাদের আবারো বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ে পড়ান আদালত মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক। আপোষনামা দাখিল করার পর আদালতের আইনী প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ী ফিরে যান এই দম্পতি।

আকতারা বানু বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখন আমরা আবারো একসাথে থাকবো। আমার সন্তানেরা একটা স্থায়ী ঠিকানা পেলো।

শাহানুর রহমান বলেন, আমরা সুখে শান্তিতেই ছিলাম। পারিবারিক কাজ কর্ম নিয়ে একটু তর্ক বিতর্ক হলেই আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়ীতে চলে যেতো। তাই রাগে ক্ষোভে আমি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের পর আমার দিন খুব কষ্টে গেছে। আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করায় আমি আরও রেগে যাই।

বাদী পক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম তাদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক মহোদয় আমাদের সেই সুযোগটিই করে দিয়েছেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবী মো. হাজিজুর রহমান বলেন, খুব সামান্য বিষয়ে তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। তবে বিচারক মহোদয়ের সাথে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এই বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেলো। তাছাড়া সন্তানরা তাদের স্থায়ী ঠিকানায় ফিরলো।

এসএ/