ট্রেনের কালোবাজারি টিকিট বিড়ম্বনার শেষ কোথায়?


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ট্রেনের কালোবাজারি টিকিট বিড়ম্বনার শেষ কোথায়?

আরাম ও স্বস্তিদায়ক যাত্রার অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো ট্রেন। দেশের অধিকাংশ মানুষই ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে। অনেকেই আবার বাসে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, তাদের জন্য একমাত্র অবলম্বন হলো ট্রেন। তবে স্বস্তির পরিবহনে অস্বস্তির বিষয় হলো, ট্রেনে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সমস্যায় পড়তে হয় টিকিট নিয়ে। বর্তমানে অনলাইনে টিকেট সেবা চালু থাকলেও দেশের প্রান্তিক মানুষের প্রযুক্তি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় ই-টিকেট সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। তার উপর আবার অনলাইন সার্ভার ডাউন, অনেক চেষ্টার পরও টিকিট কিনতে ব্যর্থ। ফলে সরাসরি টিকেট গ্রহণ করতে হচ্ছে। কিন্তু সরাসরি টিকেট গ্রহণে দেখা যায়, কিছু কুচক্রী ব্যবসায়ী কালোবাজারি টিকিট ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অত্যধিক দামে বিক্রি করছে। নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর তাগিদে অনেকে অধিক দামে টিকেট কিনতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে ঈদে বা কোনো উৎসবে এই ঘটনা বেশি ঘটে থাকে৷

সম্প্রতি লক্ষ্য করা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইন সেবার কিছুটা বিঘ্ন থাকায় সরাসরি টিকিট ক্রয়ে অনেকটা চাপ পড়েছে৷ এই ঈদে ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনেকেই আবার রাত থেকেই রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল বেলা সবার আগে টিকিট কিনবে এই আশায়। কিন্তু বাস্তবিকভাবে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। সরাসরি কিছু টিকিট বিক্রির পরেই স্টেশন মাস্টার বলেন টিকিট শেষ। অনলাইন এবং সরাসরি টিকিট সেবা চালু থাকায় যাত্রীরা বুঝতে পারে না আসলে ঘটনা কী! ফলে স্টেশন মাস্টার যা বলেন তাই মেনে নিতে হয়। আর এদিকে কুচক্রী মহল কালো টিকিট বিক্রি করছে চারগুণ পাঁচগুণ বেশি দামে। কোনো উপায় না পেয়ে এভাবেই টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছে যাত্রীরা। কালো টিকিটের সঙ্গে স্টেশন মাস্টারসহ উপর মহলের অনেকেই জড়িত বলে অভিযোগ অধিকাংশদের।

ঈদ ছাড়াও অন্যান্য সময় কিছু লোকাল স্টেশনে দেখা যায়; টিকিট কিনতে গেলে প্রথমে স্টেশন মাস্টার বলেন, তার কাছে আর টিকিট নেই, তারপর ভুক্তভোগী যখন অনুনয়-বিনয় করে বলেন, তখন তিনি অফিস থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করেন। এমন ঘটনা আমাদের দেশে প্রায় ঘটছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ শহরে যাত্রা করার জন্য যখন রেলপথ বেছে নেন, তখন একশ্রেণির মানুষ তাদের টিকিটের নামে লুটপাট করে নেয়। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

২০০৭ সাল থেকে টানা ১৫ বছর ট্রেনের অনলাইন টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ছিল সিএনএস। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইন টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পায় সহজ ডটকম। নতুন সফটওয়্যার ঠিকমত কাজ না করায় ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা৷ অনেক সময় ব্যয় করেও টিকিট কেনা যাচ্ছে না৷ এতে করে রেলওয়ের প্রতি বিমুখ হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। অথচ প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে রেলওয়ে খাতে৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমন প্রযুক্তির যুগে রেলওয়ের মত বড় একটা খাতে এসব সমন্বয়হীনতা মেনে নেয়া যায় না৷ এই ভোগান্তি লাগবে রেলওয়ের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না৷ সরকারের সংশ্লিষ্টদের রেলওয়ে সেবা খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার পরিত্রাণ করতে হবে।

এভাবে আর কতোদিন চলবে ট্রেনের টিকিট নিয়ে এমন বিড়ম্বনা? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো খুঁজে পাওয়া কঠিন। টিকিট নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। সবসময়ই এমন ঘটনা না ঘটলেও ঈদের সময় এই ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। সাধারণ যাত্রীরা এসব হয়রানি থেকে মুক্তি চায়। কোনো কোনো সময় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয় করেন। কিন্তু সবার পক্ষে এমন কালোবাজারি ট্রেনের টিকিট কেনা সম্ভব হয় না। সবশেষে বলতে চাই, ট্রেনের টিকেট বিক্রি হোক সঠিক পন্থায়। আর যারা এই কালোবাজারি ট্রেনের টিকিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নিয়ে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। কালোবাজারি রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এবং সাধারণ যাত্রীদেরও এমন কালোবাজারি টিকিট ক্রয় থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হব৷ তাদের ধরতে সহযোগিতা করতে হবে। তাই আসুন কালোবাজারি রোধে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তুলি, শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ দেশ গড়ি।

লেখক: রিদুয়ান ইসলাম, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এসএ/