শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
ঋতু পরিক্রমায় বাংলা পৌষ ও মাঘ শীতকাল। ষড়ঋতুর এই দেশে এখন আর ষড়ঋতু নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত, গরম ও বর্ষা, এ তিন ঋতুরই প্রভাব। প্রচন্ড গরম, অতিমাত্রায় শীত ও অতিবৃষ্টির প্রভাব বেশি। ষড়ঋতুতে বাংলা পৌষ ও মাঘ শীতকাল হলেও কোনো কোনো বছর কার্তিকের শেষদিক থেকে শীত শুরু হয় এবং তা থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর মাত্রা নিচে নেমে আসে। তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখনই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ শীত অনেক সময় হাড় কাঁপানো শীতে পরিণত হয়। এ বছর শীত অনেক আগে এসেছে। কার্তিক মাসের শেষদিকে ও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু দিকে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। সারা দেশে এখন হাড় কাঁপানো শীত। এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা তিন-চার গুণ বেশি।
দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতকাল বড় কষ্টের। শীতকাল এলেই দরিদ্র অসহায় মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে যায়। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
গ্রীষ্মকালের পর যেমন শীতকাল আসে তেমনিভাবে সুখের পর দুঃখ আসে। আর সুখ-দুঃখকে নিয়েই আমাদেরকে জীবনযাপন করতে হয়। একইভাবে, শীতকাল এসেছে ধনীদের জন্য সুখ, আনন্দ ও উল্লাস নিয়ে এবং গরীবদের জন্য দুঃখ, হতাশা ও অশান্তি নিয়ে। একদিকে, শীতকাল আসলে বিত্তবান শ্রেণির মানুষগুলো খুশিতে আনন্দিত হয়। অন্যদিকে শীতকাল আসলে গরীব, দুর্ভাগা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো দুঃখিত হয়। আমাদের সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য শীতকাল হল এক ধরনের অভিশাপ। আমরা জানি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো গ্রীষ্মকালে বা গরমের দিনে ফুটপাত, রেলস্টেশন ও বস্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু শীতকালে তাদের জন্য ফুটপাত কিংবা রেলস্টেশনে থাকা খুবই কষ্টকর বা অসহনীয়। তাছাড়া শীতে তাদেরকে মাঝেমধ্যে না খেয়েও থাকতে হয়। কারণ খেতে হলে তো কাজ করতে হবে, কাজকর্ম ছাড়া কেউ তো তাদেরকে আহার দিবে না। তাই শীতকালে না পারে তারা শান্তিতে ঘুমাতে, না পারে ভালোভাবে খেতে, না পারে তারা ঠিকমত কাজ করতে। শীতে তাদের জীবনযাপন শুধু কষ্টকরই না মৃত্যুর ঝুঁকিও বটে। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাতের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়।
গত কয়েক দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের তীব্রতা অনেক বেড়েছে। বর্তমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঠাণ্ডা দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের জনগণ অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, সেই সাথে ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
শীতের সময় করোনাভাইরাসের আরেক দফা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এজন্য নানা প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। তবে শীতকালে দেশের কোথাও শীত বেশি কম হতেই পারে, এতে কারো হাত নেই, এটি প্রাকৃতিক। তবে এক্ষেত্রে শীতার্তদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করণীয় আছে। সরকারের পাশাপাশি আমরাও পারি শীতার্তদের জন্য আমাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে।
শীতের সময় শহরাঞ্চলের মানুষদের তুলনায় গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো বেশি অসহায় হয়ে পরে। তারা যেখানে দু'বেলা দুমুঠো খাবার কিনতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে উঠে সেখানে শীতের বস্ত্র কিনা অসম্ভব একরকমের। গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। প্রতি বছর শীতের সময় দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ে শীতার্ত মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। অতীতে সরকারি পর্যায়েও গরিব মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার সে ধরনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে দেশে অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যে মন্দাভাবের কারণে এক ধরনের জ্বরাগ্রস্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর প্রভাব সামাজিক কর্মকা-ের ওপরও পড়ছে। কিন্তু সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে মানুষের দুুর্ভোগ শুধু বাড়বেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা যায়।
সমাজে যারা বৃত্তবান ব্যক্তিরা আছেন,তারা চাইলেই ছিন্নমূল মানুষদের এই হাড়কাঁপানো শীতের সময় একটু সাহায্য করতে পারেন। আপনাদের একটু সহযোগিতার মাধ্যমেই সমাজে বসবাসরত গরীব অসহায় মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
ছিন্নমূল মানুষগুলো শুধু শীতের সময় কষ্ট পায় না,গরবের দাবদাহ ও বর্ষার অঝোর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে জীবন নাশের পরিক্রমায় পরিণত হয়ে পরে। দেশের নিম্নাঞ্চলের মানুষগুলো বর্ষাকালে আশ্রয়স্থল, খাবাবের সংকটে পরে যায়। তাদের বেঁচে থাকা অনিশ্চয়তার মুখে পরে যায়।
যদি আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের প্রতি একটু মানবতা দেখাই এবং পাশে দাঁড়াই তাহলে আমরা তাদের অশান্তি একটু হলেও দূর করতে পারব পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হব। এই কনকনে শীতে ফুটপাত, রেলস্টেশন ও বস্তিতে বসবাস করার মানুষগুলো শান্তিতে নেই। আমাদের সবার উচিত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই এগিয়ে আসলে শীতার্তরা উপকৃত হবে।
লেখক: প্রসেনজিৎ চন্দ্র শীল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ