শান্তিগঞ্জে ২ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে দুই শতাধিক ঘর লণ্ডভণ্ড


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


শান্তিগঞ্জে ২ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে দুই শতাধিক ঘর লণ্ডভণ্ড

রাত তখন ১১টা ৪৫ মিনিট। গ্রামের মানুষজন ঘুমানোর প্রস্তুতি শেষ করেছেন মাত্র। হালকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। ১২টা বাজার আগেই এই হালকা বাতাসই বইতে শুরু করে প্রবল বেগে। শুরু হয় কালবৈশাখী তাণ্ডব। এ যেনো গাছ-ঘর উপরে ফেলার প্রতিযোগিতা। লণ্ডভড চারদিক। তান্ডব চলতে থাকে ঘন্টাব্যাপী। রাত ১টায় কিছুটা দম লয় ঘূর্ণিঝড়। এরই মধ্যে তছনছ হয়ে গেছে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নের প্রায় ২শতাধিক ঘর। ভেঙে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা।

সকালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে শিমুলবাঁক, পশ্চিম বীরগাঁও, পাথারিয়া, পশ্চিম পাগলা, দরগাপাশা ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের দুই শতাধিক বসতঘর ভেঙে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় উপড়ে পড়ে আছে ছোট বড় অসংখ্য গাছপালা। সাময়িক সময়ের জন্য চলাচলের রাস্তাঘাট বন্ধ হলেও পরে তা পরিষ্কার করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বিভিন্ন জায়গায় ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তাড়। হেলে পড়েছে খুঁটি। তাই ঘূর্ণিঝড়ের সময় থেকে এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত (বিকাল ৪টা)  বন্ধ আছে বিদ্যুত সংযোগ। সব মিলিয়ে ঘুর্ণিঝড়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন এ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। 

বুধবার সকালে সরেজমিনে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ইনাতনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একগ্রামেই ২০/৩০টি ঘরের চাল উপড়ে ফেলেছে ঘুর্ণিঝড়। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। টিন দিয়ে বানানো মসজিদও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নদীর পাড়ের এক দিনমজুরের ঘর উপড়ে ফেলেছে। জায়গায় জায়গায় উড়ে যাওয়া টিন, বাঁশ কুড়িয়ে এনে জড়ো করছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন দিনমজুরের স্ত্রী আছমা বেগম। রাস্তায় একাধিক গাছপালাও পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ইনাতনগর গ্রামের অসহায় আছমা বেগম বলেন, আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে কোনো রকমে নদীর পাড়ে এসে একটি ঘর নির্মাণ করেছি মাত্র দুই মাস হলো। সেই ঘরটি একেবারে মাটিতে মিশে গেলো। একথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। একই গ্রামের হোমিও চিকিৎসক ইকবাল হোসেন বলেন, আমার ঘরের টিন তুলে ফেলেছে। আমার ঘরের পাশে ছোট হোমিও দোকানটি তছনছ করে ফেলেছে।
পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের চিকারকান্দি গ্রামের হেলাল আহমদ বলেন, গত রাতের তুফানে আমার দুইটি ঘর ভেঙে লণ্ডভণ্ড করেছে। আমার খুব ক্ষতি হয়ে গেলো।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় খবর নিচ্ছি। কত মানুষের ক্ষতি হয়েছে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা আমাদের কাছে আসেনি। পরিষদ বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন, কতটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সে হিসেব এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণকে বলেছি খোঁজ খবর নিতে বলেছি। যারা ঝড়-তুফানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমাদের জানালে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

এসএ/