চুয়াডাঙ্গায় গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও এনজিও কর্মী!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


চুয়াডাঙ্গায় গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও এনজিও কর্মী!

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ বাজারে "নড়াইল আশার আলো ফাউন্ডেশ" এর নামে একটি বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে এক ভূয়া এনজিও কর্মী। এছাড়াও চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকজনের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

অথচ এনজিওটি’র নির্বাহী পরিচালক আফরোজা খানম বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে আমাদের কোনো শাখা নেই। সোহেল রানা নামের যে ব্যক্তি ওই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতারণা করছে বলে শুনছি সে এক সময় এই এনজিওতে চাকরি করলেও অনিয়মের কারণে তাকে চাকরিচ্যুত
করা হয়েছে বহু আগে।

জানা গেছে,  চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ সড়কের সরোজগঞ্জ সরকারি ফুড গোডাউনের অদূরে ৪র্থ তলা ভবনের দোতলা ভাড়া নিয়ে "নড়াইল আশার আলো ফাউন্ডেশন" নামক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) শাখা কার্যালয় খুলে বসেন সোহেল রানা নামের একজন। তিনি কখনো সোহেল কখনো রানা নামে পরিচয় দেন। বাড়ি ঝিনাইদহ জেলা শহরে বলে পরিচয় দিলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি ঝিনাইদহ জেলা সদরের সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার অনেকে।

অভিযোগ উত্থাপনকারীদের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগীর মধ্যে একজন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কন্যা রত্না খাতুন। তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২১ হাজার ৭শ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিযুক্ত। এ টাকা নিলেও তার কোনো প্রমাণ দেয়নি অভিযুক্ত সোহেল রানা।

অপর অভিযোগকারী একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাহাবুর হোসেন অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করলেও তাকে একাউন্টস অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার কাছ থেকে ২৭ হাজার ৩শ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া সোহেল রানা তার নিযুক্ত কিছু মাঠ কর্মীর মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ঋণ দেয়া এবং অল্প লগ্নিতে অধিক মুনাফা দেয়ার প্রলোভনে ৫শ টাকা করে সদস্য ভর্তির কথা বলে ১১শ টাকা করে নিয়েছে। এবং গ্রাহকদের ভুলভাল বুঝিয়ে ৪ মাস পর তাদের ঋন দেয়ার কথা জানিয়ে সম্প্রতি নানা টালবাহানা শুরু করে। এতেই বেরিয়ে আসে সোহেল রানার আসল রূপ।

সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের নার্গিস খাতুন নামে এক গৃহবধূ বলেন, ছাগলের জন্য লোন দেয়ার কথা বলে ভর্তি করে আমাদের কাছ থেকে ৫শ করে ট্যাকা নিয়েছেন। একই গ্রামের মাছিদুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা খাতুন বলেন, আমরা ৩০-৪০ জন একসাথে ৫শ করে টাকা দিয়েছি ঋনের আশায়। 

ভুক্তভোগী সাহাবুর রহমান জানান, আমার এলাকার প্রায় ২৭০ জন সদস্যের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা তোলার পর আর আসেননি। তার কর্মকান্ড সব সন্দেহ হলে আমরা তার প্রতারণার কথা জানতে পারি। 

এদিকে গত সোমবার সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের সেবা এনজিও’র মালিক যুবলীগ নেতা রাশেদুজ্জামান পলাশের অফিসের আসবাবপত্র ক্রয় করে টাকা না দিলে পার্শ্ববর্তী কালুপোল বাজারে তার মোটরসাইকেল আটকিয়ে সোহেল রানার নিকট থেকে  টাকা আদায় করেন তিনি। 

এ সময় খবর পেয়ে এলাকার ভুক্তভোগীরা সেখান সমবেত হন টাকা ফেরতের জন্য। পরে সেখান অভিযুক্ত সোহেল রানা টাকা নিয়ে আসার কথা বলে সটকে পড়েন। 

গড়াইটুপি গ্রামের প্রবাসী আবু বাক্কার ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাকে ৩০ লাখ টাকা লোন দেয়ার কথা বলে একাউন্ট খুলে ১/২ হাজার
টাকার ডিপিএস করার কথা বলেন। পরে লোন দেয়ার আগে সঞ্চয় বাবদ ৫০ হাজার টাকা চান। আমাদের এদিকে অনেকেই ১১শ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে প্রতারণা আঁচ করতে পেরে আবার টাকা ফেরত নিয়েছেন। এদিকে চাকরিপ্রার্থী গরীব দুজন টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন মানুষের দারস্থ হচ্ছেন। 

এ বিষয়ে "নড়াইল আশার আলো ফাউন্ডেশনের" ওয়েবসাইটে দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে আফরোজা খানম নামের নির্বাহী পরিচালক জানান, সোহেল রানা একসময় আমাদের স্টাফ ছিলেন। আমাদের অফিস হচ্ছে নড়াইল রুপগঞ্জে। চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে আমাদের অফিস নেই। তিনি একজন প্রতারক। এলাকার মানুষকে সম্ভবত ঠকাচ্ছে। আপনারা তাকে আইনে সোপর্দ করেন। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সারোয়ার সোহেল রানার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এই এনজিওর সম্পর্কে আমি জেনেছি।  গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালক মৌমিতা পারভীন জানান, এ ধরনের এনজিও সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবে বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া জানান, ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এসএ/