সারাদেশে ১১ দফা কঠোর বিধিনিষেধ, না মানলে জেল-জরিমানা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সারাদেশে ১১ দফা কঠোর বিধিনিষেধ, না মানলে জেল-জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) শুরু হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করোনা রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত। রাজধানী ঢাকা ও পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্হ্য অধিদপ্তর। এদিকে ওমিক্রন ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা হবে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ১১টি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হচ্ছে।

ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কাৰ্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।  

১. দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনও সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্ব প্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।

১০. উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

১১ বিধিনিষেধের মধ্যে উন্মুক্ত স্হানে রাজনৈতিক ও সামাজিক সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল, মাস্কবিহীন চলাচলকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান এবং বিধিনিষেধ কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা। 

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলেন, এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করবে দেশের সংক্রমণ পরিস্হিতি। বিধিনিষেধ মানলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তবে না মানলে পরিস্হিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। 

ওমিক্রন বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রস্ত্ততি জানিয়ে স্বাস্হ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ২০ হাজার শয্যা তৈরি রেখেছিল। আরো ২০ হাজার শয্যা প্রস্ত্তত করা হচ্ছে। যদি ৪০ হাজার রোগী হয়, তাহলে রাখা যাবে। কিন্তু যদি ১ লাখ হয়, তাহলে কোথায় থাকবে? এখন মৃত্যুর হার কম আছে, কারণ হলো টিকা নেওয়া আছে। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা যদি তিন-চারগুণ হয়ে যায়, তাহলে বেকায়দায় পড়তে হবে। এখনই সতর্ক না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে জায়গা দিতে সমস্যা হবে। আমরা ধরে নিই, ৫ শতাংশের হাসপাতালে আসতে হয়। এরই মধ্যে হাসপাতালে রোগী আসা শুরু হয়ে গেছে। আমরা দেখব, আগামী পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই অনেক রোগী হয়ে যাবে হাসপাতালে। তখন আবার একটা কষ্টকর অবস্হা তৈরি হবে। হাসপাতালে প্রেশার পড়বে, চিকিত্সক-নার্সদের ওপর প্রেসার পড়বে। সিট পেতে সমস্যা হবে, মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। এটা বাস্তবায়নের ওপরই দেশে সংক্রমণ পরিস্হিতি কোন দিকে যাবে, সেটা নির্ভর করছে। বিধিনিষেধ না মানলে চিকিত্সাসেবা প্রদান কঠিন হবে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যাবে না।”

তিনি বলেন, “স্বাস্হ্যবিধি মানানোর বিষয়টি শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়। প্রশাসন, স্হানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষকে এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।”

সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় সারা দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্হ্য অধিদপ্তর। লাল রংকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, হলুদকে মধ্যম এবং সবুজকে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

এসএ/