চট্টগ্রামের পুরাতন ব্রীজঘাটের মাছ যাচ্ছে সারাদেশে
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
পুরাতন ব্রীজঘাট থেকে সামুদ্রিক মাছ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ফিস ট্রেডার্স নামে পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্র।
ভরা মৌসুমে রাত-দিন চলে ট্রাকে মাছ বোঝাই-এর কাজ। নদীতে সারিসারি মাছ ভর্তি ইঞ্জিন চালিত বোর্ড (নৌকা) অপেক্ষমান নদীর পাশ ঘেঁষে ট্রাকে চলছে মাছ বোঝাই-এর কাজ। গত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) বন্ধের দিনে পুরাতন ব্রীজঘাট এলাকায় এসে দেখা যায় এমন কর্মব্যস্তময় দৃশ্য। এ ঘাট থেকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বাজারসহ ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সিলেটের বিভিন্ন বাজারে চলে যাচ্ছে খাওয়ার মাছ। ছোট-শুটকির মাছগুলো চলে যাচ্ছে কর্ণফুলীতে অবস্থিত শুটকি পল্লীতে ও কক্সবাজারের নাজিরারটেকে।
মাছ উঠা-নামার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের শ্বাস ফেলার সময় নেই। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলতে চাইলে খাইরুল নামের এক শ্রমিক বললেন ‘ভাই সময় করে আসেন কথা বলা যাবে, এখন হাতে সময় নেই।’ শ্রমিকদের ব্যস্তময়তা দেখে কথা হয় মেসার্স আলাউদ্দিন ফিস ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ আলা উদ্দিন মিয়ার সাথে তিনি জানান চরপাথরঘাটা পুরাতন ব্রীজঘাট এলাকায় এ মাছের ব্যবসাটি চলে আসছে বিগত ১০-১২ বছর পূর্বে থেকে। এর পূর্বে আমরা ব্যবসা করতাম শহর পাড়ের বিভিন্ন ঘাটে।
মুহাম্মদ আলাউদ্দিন মিয়ার ন্যায় এখানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন নুরুল আবছার কালো, মোহাম্মদ খোকন, বাদশা মিয়া, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনসহ আরো অনেকে। এখানে গড়ে উঠেছে ২০-২৫ (ফিস ট্রেডাস) পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্র। এসব পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্রে নেই কোন সীল পাল্লার ব্যবহার। এখান থেকে ট্রাক ভর্তি মাছ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে।
এ ব্যাপারে কথা হয় আল্লাহদান ফিস ট্রেডার্স এর বাদশা মিয়ার সাথে উনি জানান, বিশেষত্ব ছোট মাছগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অথবা শুটকি পল্লীতে। সরকার ঘোষিত মাছ আহরণ বন্ধ থাকা ব্যথিত সারা বছরেই আমাদের ব্যবসা চলমান থাকে। এখানে মুলত স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। নিয়ম শৃঙখলায় গঠন করা হয়েছে ‘কর্ণফুলী ট্রলিং মাছ ব্যবসায়ী সমিতি লিঃ’ নামে ব্যবসায়ী সমবায় প্রতিষ্ঠান। সমিতির সভাপতি নুরুল আবছার কালো ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ খোকন।
এ ঘাটে প্রতিদিন ৫০-৬০জন শ্রমিক মাছ উঠা নামা কাজে নিয়োজিত। সেই সাথে কর্ণফুলী নদীতে ইঞ্জিন চালিত বোর্ড (নৌকা) কাজে নিয়েজিত ২০-৩০ জন। বরফ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ৪-৫টি, ট্রাকে নিয়োজিত ২০-৩০ জন ড্রাইবার হেলপার সব মিলেয়ে এ ব্যবসায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ২ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সমিতির সভাপতি নুরুল আবছার কালো জানান, এ ঘাট থেকে ভরা মৌসুমে ১০০ টনের অধিক ও নিয়মিত দৈনিক ১২-১৫ টন সামুদ্রিক মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। যার বাৎসারিক লেনদেন দাঁড়াবে শত কোটি টাকায়। কোন ধরনের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বিহীন স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে ব্যবসায়ীরা। এ ঘাট থেকে সংগ্রহ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন রাত্রি বেলায় খুচরা মাছ বিক্রয় করছে। সরকার যদি সহজ শর্তে প্রতিষ্ঠিত সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবসায়ীদের ঋণদানের ব্যবস্থা করে তাহলে পুরাতন ব্রীজঘাটের সামুদ্রিক মাছ পাইকারী আড়ত হবে দেশের অন্যান্য বাজার থেকে শীর্ষে। কারণ এখানের যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরবরাহ ও মৎস্য সংরক্ষণের বেশকটি প্রতিষ্টান রয়েছে যার ফলে মাছ নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এসএ/