পুলিশের অমানবিক আচরণ; ৪ এসআই বহিষ্কার ও ২ সদস্য ক্লোজড


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পুলিশের অমানবিক আচরণ; ৪ এসআই বহিষ্কার ও ২ সদস্য ক্লোজড

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক স্ত্রী,পুত্র সহ ৪ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় ৪ এসআইকে বহিষ্কার ও ২ পুলিশ সদস্য ক্লোজড করেছে জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ। ১০ মে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর রাতে তাদের প্রত্যাহার করা হয়।

জানা যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড়ে থাকা ভিক্ষুক আব্দুল জলিল ও তার লাইলী বেগম,পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক ও ওয়াজকরণী কে সরিষাবাড়ী থানার এস আই মুনতাজ আলী তাদেরকে থানায় যেতে বললে ভিক্ষুক আব্দুল জলিল আপত্তি জানানো সত্তে¡ও বারবার জোর প্রয়োগ করে থানায় নিতে চেষ্টা করলে আব্দুল জলিল আত্মচিৎকার দেয়। এ প্রেক্ষিতে পুলিশের পোশাক বিহীন সরিষাবাড়ী থানার এস আই আলতাব হোসেন ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের মুখ চেপে ধরে বলে ভুক্তভোগী পরিবার রাশেদ মিয়া অভিযোগ করেন। গ্রেফতার কালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মুনতাজ আলী, সরিষাবাড়ী থানার এস আই সাইফুল ইসলাম, এস আই ওয়াজেদ আলী, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সাথী আক্তারসহ কয়েকজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক স্ত্রী,পুত্র সহ ৪ জনকে গ্রেফতার এ ঘটনায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌর সভার বাউসী বাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিল এর দখলীয় জমি জবর দখলে নিতে একই গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী’র ছেলে মজিবর রহমান ভাডাটিয়া লোকজন নিয়ে বসত বাড়ীতে সোমবার দুপুরে হামলা ভাংচুর সহ মারপিটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং আহত ভিক্ষুক আব্দুল জলিল(৬০), আবু বক্কর সিদ্দিক(৩০), ওয়াজকরণী(২৫) ও লাইলী বেগম(৫০), জসিম(৩২), ছালমা(৩৮), শুভ(১৯), শাহীদা(৫৫) পুলিশী হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারপিটের ঘটনায় আব্দুল জলিলের পক্ষে থানায় মজিবুর রহমানের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নিয়ে প্রভাবশালী মজিবর রহমানের দায়ের করা মামলায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিল কে প্রধান বিবাদী করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরোও ২/৩ জন কে অজ্ঞাত নাম করে সোমবার রাতে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় পুলিশ দ্রুত ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের পরিবারের ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছেন থানা পুলিশ। সরিষাবাড়ী থানার মামলা নং-০৯,তারিখ-০৯-০৫-২০২২ইং। বিষয়টি দৈনিক জনবাণী সহ একাধিক জাতীয় পত্রিকার অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মুনতাজ আলী, সরিষাবাড়ী থানার এস আই সাইফুল ইসলাম,এস আই ওয়াজেদ আলীকে বরখাস্ত, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সাথী আক্তারকে ১০ মে রাতে জামালপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ।

এদিকে দৈনিক জনবাণী পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মাসুদুর রহমান জানান, আমার ওপর হামলা হয়েছিল। থানায় মামলাও করেছি, ১ মাস ১০ দিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। আমার মামলার প্রধান আসামীর বাবার নামে সাজা ওয়ারেন্ট রয়েছে। হাসপাতালের ঘটনায় নিউজটি প্রকাশ করার পর সন্ধ্যায় আমাকেও গ্রেফতারের পায়তারা করেছিল।

এ বিষয়ে জামালপুর সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সুমন জানান, উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করে সরিষাবাড়ী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে । ঘটনার তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিভাগীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান,উক্ত ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের ইতিমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত পূর্বক সর্বোচ্চ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএ/