স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসামী গ্রেফতারের পদ্ধতি আইন সম্মত হয়নি: এসপি জামালপুর


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসামী গ্রেফতারের পদ্ধতি আইন সম্মত হয়নি: এসপি জামালপুর

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসামী গ্রেফতারের পদ্ধতি আইন সম্মত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জামালপুর জেলা পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ। 

বুধবার (১১ মে দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তিনি এ মন্তব্য করে আরো বলেন, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানায় দু পক্ষের জমি জমা নিয়ে যে বিরোধ হয় এবং মারামারির ঘটনা ঘটে।এতে দু পক্ষেরই কিছু মানুষ আহত হয়।  উক্ত ঘটনার দুপক্ষেরই দুটি মামলা হয়। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ অবস্থায় সরিষাবাড়ী থানার ৪ জন এসআই ও ২ জন পুলিশ সদস্য যে ভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসামী গ্রেফতার করার পক্রিয়া বা পদ্ধতি ব্যবহার করেছে এটা কোন ভাবেই বিধি সম্মত বা আইন সম্মত হয়নি। এভাবে আসামী গ্রেফতার করা যায় না। আমরা এ ঘটনা জানার সাথে সাথে এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে দেখার সাথে সাথে ৪ জন সাব ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ড ও ২ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত রিপোর্ট স্বাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং এই ঘটনার সাথে যদি ওসির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পাঠাব আমরা।
 
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জাহিদ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ, হাসপাতাল ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,  জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার বাঙ্গালী মৌজার খতিয়ান ১২৭৫ ও জেএল নং- ২৮ অনুযায়ী দাগ নং- ১১০২৬,১১২০৭,১১০২৮ কান্দায় ১ একর ২৬ শতাংশ জমির মালিক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জামালপুর জেলা প্রশাসক। ১৯৭৪ সনের ৪৫ নং আইনের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের অর্পিত সম্পত্তির সাবেক মালিক রয়েছেন কয়েকজন।  এই জমিকে কেন্দ্র করে মোঃ  মজিবর রহমান(৫৫) এবং ভিক্ষক আঃ জলিল(৫৫) এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ চলছে।  গত ৯ মে সোমবার ১২ টায়  উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে জলিলসহ তার গ্রুপের  ৫ জন গুরুতর জখম হয় এবং প্রভাবশালী মজিবর গ্রুপের একজন গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসআই করিম ও এএসআই মাসুদ করিম উভয় পক্ষের দুজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।  ফকির জলিল গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় থানায় মজিবর গ্রুপের বিরুদ্ধে  মামলা করতে আসলে ওসি মামলা না নিয়ে পক্ষ পাতিত্ব করে  ফকির জলিলকে থানা থেকেই আটক করেন।  তখন  জলিলের মাথায় অতি রক্ত ক্ষননের কারনে অসুস্থ হয়ে পরলে বাধ্য হয়ে ডিউটি অফিসার তাকে সহ আবু বক্কর সিদ্দিক(৩০),ওয়াজকরণী(২৫) ও লাইলী বেগম(৫০), জসিম(৩২), ছালমা(৩৮), শুভ(১৯), শাহীদা(৫৫) পুলিশী হেফাজতে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরন করেন। দু পক্ষের দাবী হিন্দুদের নিকট থেকে ক্রয় করেছেন।  

এদিকে মজিবরকে জমি দখল করিয়ে দেওয়ার নামে ৬ লক্ষ টাকা চুক্তি করে স্থানীয় অসাধু  ব্যক্তি আকাশ। তার মাধ্যমেই গভীর রাতে ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হক মজিবরের ভাতিজী জামাই রোকনকে ছেড়ে দেয়। এবং ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মজিবর রহমানের দায়ের করা মামলায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিল কে প্রধান বিবাদী করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার রাতে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা নেন । সরিষাবাড়ী থানার মামলা নং-০৯,তারিখ-০৯-০৫-২০২২ইং।

ওই মামলায় অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হকের নির্দেশেই ১০ মে সকাল ১১ টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মুনতাজ আলী,সরিষাবাড়ী থানার এস আই সাইফুল ইসলাম,এস আই ওয়াজেদ আলী, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সাথী আক্তারসহ কয়েকজন পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে নির্যাতন ও টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক স্ত্রী,পুত্র সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে জামালপুর কোর্টে প্রেরণ করেন । ফকির জলিল চিতকার দিলে সরিষাবাড়ী থানার এস আই আলতাফ হোসেন মুখ চেপে ধরে।

হাসপাতালের বেড থেকে টেনে হিচড়ে গ্রেফতার করার বিষয়টি দৈনিক জনবাণী পত্রিকা ও অনলাইনে খবর প্রকাশ হয়। জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া জন্ম নেয়। তারপরই সন্ধ্যায় ওসি তার রুমে জনবাণীর সাংবাদিক মাসুদকে গ্রেফতারের পায়তারা চালান। এদিকে রাতে জামালপুর পুলিশ ভিডিও ও অনলাইন পত্রিকার নিউজ গুলো নজরে নিয়ে এস আই মুনতাজ আলী, এস আই সাইফুল ইসলাম,এস আই ওয়াজেদ আলী, এসআই আলতাফকে সাময়িক বরখাস্ত এবং পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সাথীকে জামালপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করেন। জেলা পুলিশ সুপারের এমন সিদ্ধান্তের সংবাদে পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে স্টেটাস দিয়েছেন সরিষাবাড়ীবাসী। সেই সাথে বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

এসএ/