কারাগারে হাজী সেলিম
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (২২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ পূর্বক আপিলের শর্তে জামিন আবেদনের করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আত্মসমর্পণ পূর্বক আপিলের শর্তে জামিন আবেদনের পাশাপাশি আরও দুইটি আবেদন কারাগারে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেতে ও দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ার আবেদন জমা দেন হাজি সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ।
আত্মসমর্পণ পূর্বক জামিন আবেদনে বলা হয়, হাজি সেলিম বাংলাদেশের পর পর তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বর্তমানেও তিনি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও করদাতা। তাছাড়া তিনি ২০১৬ সালে হার্ড সার্জারী করাকালিন সময় তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হাওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ বাকশক্তিহীন অবস্থায় আছেন। তার কথা বোঝা যায় না। তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। কারাগারে থাকিলে চিকিৎসা অভাবে ও বাকশক্তিহীনতার কারণে মারাত্মক দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে যেকোন শর্তে তার জামিন আবেদন করা হয়।
প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পাওয়ার আবেদনে বলা হয়, হাজি সেলিম একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি, একজন নিয়মিত করদাতা, সিআইপি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন সেকারণে জেল হাজতে তাকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়া প্রয়জন।
এছাড়াও দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ার আবেদন বলা হয়, হাজি সেলিম উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভুগিতেছেন সেহেতু তার প্রতিনিয়ত রক্তচাপ চেকআপ করতে হয় এবং নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয় বিধায় দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে বেটার টিটমেন্টের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
উল্লেখ্য, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এরপর দুদক মামলার চার্জশিট দাখিল করে।
চার্জশিটে বলা হয়, হাজি সেলিম জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে প্রায় ২৬ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া, সম্পদ বিবরণীতে প্রায় ১০ কোটি ৪ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। হাজি সেলিম তার সম্পদ বিবরণীতে প্রায় ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার হিসাব বিবরণী দাখিল করেছিলেন।
বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল রায় দেন। রায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলা হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জনে হাজি সেলিমকে সহযোগিতা করার দায়ে তার স্ত্রী গুলশান আরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজি সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজি সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সে নির্দেশনার আলোকে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুদক হাজি সেলিমের আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করে।
সেই আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্ট ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি তলব করেন। নথি আসার পর গত ৩১ জানুয়ারি আপিলের শুনানি শুরুর পর গত বছর ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্ট রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগম মারা যাওয়ায় তার আপিলটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ মামলায় জামিনে ছিলেন হাজি সেলিম।
এস/ওআ