রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরবতা নয়, দরকার কার্যকারি পদক্ষেপ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরবতা নয়, দরকার কার্যকারি পদক্ষেপ

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট উখিয়ার রহমতের বিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফমুখী ঢল নামে। এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে এগার লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। অনুপ্রবেশের চার বছরের বেশি হলেও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিলেও মিয়ানমার সরকারের নানা টালবাহানায় আশ্রিতদের ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া কোনভাবেই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। নিজ দেশে ফেরার আগ্রহ থাকলেও প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তায় চরম হতাশায় রোহিঙ্গারাও।কক্সবাজারের মানুষদের দাবি, সময় যতোই গড়াচ্ছে ততোই রোহিঙ্গাদের কারণে বাড়ছে নানামুখী সংকট। এদিকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছে নানা সংকট, আশংকা দেখা দিচ্ছে সংঘাতের। এরইমধ্যে উজাড় হয়েছে বন, পাহাড়, কৃষি জমি ও কাজ হারাচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকরা। তাই দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার দাবি সুশীল সমাজের। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। সে সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে মায়াকান্না ছিল; সেটি  চার বছর পরে এসে দেখছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেকটায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এই অবস্থা যদি চলমান থাকে তাহলে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাস করা দুরহ হয়ে পড়ছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দ্রুত মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা। আমরা যাই করি না কেন আমাদের প্রধান ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যাবাসন। 

উল্লেখ্য, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর জন্য ২০১৮ সাল থেকে কয়েক দফায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯১৯ জন রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা ছাড়া মিয়ানমার সরকার কাউকে ফেরত নেয়নি আজও। রাখাইনে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার সময় চার বছরের বেশি। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা পরিকল্পিতভাবে সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন চালায়। রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অঙ্গীকার করেও বিগত চার বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমার ফেরত নেয়নি। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে রাখাইনে সৃষ্টি করেনি রোহিঙ্গাদের থাকার উপযোগী নিরাপদ পরিবেশ। মিয়ানমারের বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং আগে থেকেই জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে আশ্রয় দিতে গিয়ে ক্লান্ত। এ দিকে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় এবং চীনকে সাথে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার পশ্চিমা দেশগুলোর এখন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের চেয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান মিয়ানমারের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দিলেও তাদের এজেন্ডায় রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইস্যুটি স্থান পায়নি। 

তবে রোহিঙ্গা নিপীড়নে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় আপিল আদালতে যথাক্রমে বিচার, তদন্ত ও শুনানি চলছে। আইসিজে রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া এবং হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের আলামত সংরক্ষণের জন্য মিয়ানমারের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেছে। আইসিসি রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির কারণ তদন্ত করছে। আর আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় আপিল আদালত রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের জন্য ‘বিচারের সর্বজনীন এখতিয়ার’ প্রয়োগ করা যায় কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছে। তবে এসব মামলার প্রক্রিয়া দীর্ঘ, যার ফলাফল পেতে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের উচিত অত্যন্ত কৌশলী হয়ে আইন ও বাস্তবতার নিরিখে জোরেশোরে লবিং শুরু করা এবং যেভাবেই হোক মিয়ানমারকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে বাধ্য করা। এভাবে আর কত চলবে? চলতে পারে না। একটি স্বাধীন দেশের ওপরে এমন একটি স্বেচ্ছাচারিতা চালানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। মিয়ানমারের সঙ্গে অনেকবার বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছে। কোনও লাভ হয়নি। তারা এগিয়ে আসেনি। রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে মিয়ানমার অত্যাচার চালিয়ে আসছে সেটি কোনোভাবেই মানবতার সংজ্ঞায় আসে না। তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে তারা বাংলাদেশের ওপর চাপাতে পারে না। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক যে বাণিজ্যিক হিসাব সেখানে বাংলাদেশের নিজের জায়গাটা আগে অংক করে বের করতে হবে। মিয়ানমারকে কেমন করে টেক্কা দিয়ে নিজেদের দিকে চীন, ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রকে টানা যায় সেই জায়গাটি যদি বের না করা যায় তবে আরও অনেক ভোগান্তি আছে বাংলাদেশের ভাগ্যে।

মানবতার স্বীকৃতি কেবল বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের মানবতা এখানে কোথায়? একা বাংলাদেশের পক্ষে এ মানবতা বেশি দিন ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। নিজেদের সমস্যায় যে দেশটি জর্জরিত তাদের জন্য অন্য আরেকটি দেশের সমস্যাকে টেনে বয়ে চলার কোনও মানে হয় না।নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ যেমন ঠেকাতে হবে তেমনি পুরনো রোহিঙ্গাদের যে করেই হোক ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে বাধ্য করার রাস্তাও খুঁজে বের করতে হবে।রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব সম্প্রদায় শুরু থেকেই খুব একটি সোচ্চার ছিল না। মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমারা বেশি তৎপর হয়ে উঠেছিল।

কিন্ত তাও এখন ফিকে হয়ে আসছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের খুব একটা সুযোগ নেই বলে তারা মনে করছে। অদূর ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চি সরকারকে নিয়ে পশ্চিমাদের অনেক মাতামাতি ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেল রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষায় অনীহার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সাথে সু চির খুব একটি মতপার্থক্য নেই। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন চলার সময়ে সু চিকে নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। এখন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এনএলডিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বিকল্প সরকার রোহিঙ্গা ইস্যু নিরসনে সোচ্চার হবে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সমাজে অন্তর্ভুক্তি ও তাদের মৌলিক অধিকারগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সব রকম উপায়ে বাংলাদেশকে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

রোহিঙ্গাদের নিজেদের আবাসস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মতো বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। জাপানসহ কয়েকটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি মিয়ানমারের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে, বিনিয়োগ চালিয়ে যাচ্ছে।কিছু দেশ মিয়ানমারের সাথে সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করেছে আর কিছু দেশ তা অব্যাহত রেখেছে। অন্য দিকে জাতিসঙ্ঘ ঠুটো জগন্নাথের মতো ভূমিকা পালন করছে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নেতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপরদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আসিয়ান সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারত। কেননা মিয়ানমারও এই জোটের সদস্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আসিয়ানের ভূমিকা হতাশাজনক। আসিয়ানের বোঝা উচিত, নিজ দেশে নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর হতাশা থেকে চরমপন্থার জন্ম হলে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকেই পোহাতে হবে। 
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আসিয়ানকে সক্রিয় করতে বাংলাদেশকে আরো জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। বাংলাদেশের সমাজে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশ্বব্যাংকের দেয়া প্রস্তাব দেয়া ঔদ্ধত্যের শামিল, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এটিও ঠিক, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় আর কত দিন আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়া যাবে, তাও বাংলাদেশ নিশ্চিত নয়। তাই রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা থেকে দূরে রাখা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কতটুকু উচিত হবে তা বিবেচনায় নেয়া একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যা নব্বইয়ের দশকের সমস্যার এক ব্যাপক সংযোজন। 

এমনকি এই সমস্যা হচ্ছে কয়েক দশকের মধ্যে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সঙ্কট। এই সমস্যার শেঁকড় রাখাইনে। তবে এখানে আমাদের জন্য আরও হতাশার বিষয় হচ্ছে যে আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংকট বিশ্লেষণে এটা পরিষ্কার যে, শরণার্থী সংকট যতই দীর্ঘায়িত হয়, সমাধানের সম্ভাবনা ততই সংকুচিত হয়ে পড়ে। আর আমরা সম্ভবত এই সংকোচনের পথেই যাচ্ছি।বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যা নিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও সমস্যা সমাধানে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। তার পরও বলব, রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে আরও সেচ্ছাচার ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এটি কারো একার সমস্যা নয়,এটি দেশ জাতির কল্যাণের পরিপন্থী একটা বিষয়। যার নীরব ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য বিরাট ক্ষতি হওয়ার সমীহ সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই আর দেরী না করে এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া ভীষণ জরুরী। আমাদের মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়াই হবে এর সমাধান। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমাধানও হতে হবে।

লেখক: রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট।  

এসএ/