শ্রীপুরে জন্ম নিবন্ধন যেন জন্ম নেয়ার শাস্তি!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


শ্রীপুরে জন্ম নিবন্ধন যেন জন্ম নেয়ার শাস্তি!

প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ও তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধনের সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টারের নামে বহিরাগত উদ্যোক্তা ও ইউপি সচিব মিলে এই সিন্ডিকেট তৈরী করেছেন। যেখানে টাকা না দিলে নাগরিকদের জন্মনিবন্ধনের সেবা মিলছে না। এছাড়াও সরবরাহ করা অধিকাংশ জন্ম নিবন্ধন ইচ্ছাকৃত ভুল করে সংশোধনের নামে হয়রানির করার অভিযোগ পাওয়া গেছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারন মানুষ ভোগান্তির শিকার হলেও এখানে নজর নেই কারোও। 

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মধ্যে এই দুই ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকলাখ মানুষের বসবাস। সরকার বিভিন্ন সেবাখাতে নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় সাধারণ লোকজন এ সেবা নিতে ইউনিয়ন পরিষদে ভিড় করছে। এ সুযোগে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এনামুল হক মোল্লা ও তেলিহাটি  পরিষদের সচিব হান্নান মিয়া মিলে সিন্ডিকেট তৈরী করেছেন। দুটি ইউনিয়ন পরিষদেই দালাল বেষ্টিত হয়ে পড়ছে। প্রায় অর্ধশত বহিরাগত লোক এ সেবা নিতে আসা সাধারণ নাগরিকদের জিম্মি করেছে তারা। কোন সেবাগ্রহিতা সরাসরি সচিবদের সামনে গেলে তারা সিন্ডিকেটের পথ দেখিয়ে দেন। জন্ম নিবন্ধনের এই সিন্ডিকেটকে সরকার নির্ধারিত ফ্রি'র চেয়ে কয়েকগুন অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সেবে গ্রাহীতাদের কাছ থেকে। তাদের চাহিদামতো টাকা না দিলে নানা অজুহাতে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানী করছে। 

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদে বহিরাগত ফরহাদ আহমেদ ও মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর শরিফুল ইসলাম এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও তাদের মূলে রয়েছেন দুই সচিব। তারা এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। 

আবদার গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলেরনি মিয়া স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক। কারখানা থেকে আদেশ দেয়া হয় করোনার টিকা নিয়ে যেন কারখানায় যোগ দেন। আর এতে প্রয়োজন জন্ম নিবন্ধন। তিনি ছুটে যান তেলিহাটির জন্ম নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা উদ্যোক্তা ফরহাদ মিয়ার কাছে। তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করা হয়। পরে ৭ হাজার টাকায় রফাদফা করে তিনি জন্ম নিবন্ধন পান। 

একই অভিযোগ স্থানীয় আফির মিয়ার। তার দাবী নিজের জন্ম নিবন্ধন করতে তিন হাজার টাকার উপর খরচ হয়েছে তার। তিনি প্রথম কয়েকদিন ঘুরলেও সচিব দেখিয়ে দেয় উদ্যোক্তা ফরহাদকে। পরে তার সাথে রফাদফা করতে হয়। 

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকারের বাসায় কাজ করেন বানেছা আক্তার। তার কাছ থেকেও নেয়া হয়েছে ৮শত টাকা। 

মাওনা গ্রামের কাইসার আহমেদ বলেন, তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন তিনি করতে পারেননি। ইউপি সচিব এনামুল হক মোল্লা তার নিকট জন্ম নিবন্ধন করে দিবেন বলে আড়াই হাজার টাকা দাবী করেন। তার চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় তিনি এ সেবা পাচ্ছেন না। ৯দিন গিয়ে তাদের পেছনে ঘুরে এখন আর তিনি যান না। 

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য মতে, মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এনামুল হক মোল্লা প্রতিদিন গাজীপুর শহর থেকে ৪০কিলোমিটার দুরে থেকে কর্মস্থলে আসেন। সেখান থেকে পরিষদে পৌছতে তার দুপুর হয়ে যায়। সেবাগ্রহীতারা তার কাছে কাজের জন্য গেলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়, পাশাপাশি তার নির্ধারিত দালালী সিন্ডিকেট দেখিয়ে দেন। সেখানে না গেলে যেমন কাজ হয় না, তেমনি প্রতিটি কাজে তাকে অতিরিক্ত টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। 

বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যানের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হয়নি। 

টেপিরবাড়ী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লুৎফর রহমান ফরহাদ বলেন, নজরদারীর অভাবে ইউনিয়ন পরিষদগুলো এখন ভোগান্তির কারখানা। এরা টাকা ছাড়া যেমন কাজ করে না, তেমনি তাদের সরবরাহ করা জন্ম নিবন্ধনগুলো ভুলে ভরা। বিভিন্ন বহিরাগত থাকায় এদের জবাবদিহিতা নেই। পরে আবার সংশোধনের নামে হয়রানী করেন। শতকরা ৯৫ ভাগ লোক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এ খাতে সরকারের নজরদারী বাড়ানো প্রয়োজন। 

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হান্নান মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেন। 

তিনি বলেন, হয়তো ডিজিটাল সেন্টারের লোকজন এসব করছেন, তারা বহিরাগত। চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে বহিরাগতদের বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। 

বক্তব্য জানতে চাইলে মাওনা ইউপি সচিব এনামুল হক মোল্লা বলেন, এসব বিষয়ে আমি কোন কথা বলবো না, আগামীকাল সরাসরি আসেন। 

তবে ইউপি চেয়ারম্যানকে একাধিকাবার ফোন দিলেও তা গ্রহন করেনি।

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, অনেকেই হয়রানীর কথা আমাদের কাছে বলেন। পরে আমরা ডেকে সমাধান করি। তবে অনেকেই আবার বলেন না। সব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ভোগান্তি লাগবের চেষ্টা করবেন।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের এসব বিষয়ে সতর্ক করব। আর আমার কাছে সংশোধনের জন্য কেউ এলে তাৎক্ষনিক সঠিক প্রমাণপত্র দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমার কার্যালয়ে কাউকে হয়রানীর সুযোগ নেই।

এসএ/