বাকৃবি’র পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক হওয়া নিয়ে অনিয়ম, তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা!
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে পিএইচডি তত্ববধায়ক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কিন্তু র্দীঘ সময়েও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের নেতারা।
তাদের অভিযোগ, অধ্যপক সাইদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সাবেক সভাপতি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তার করে তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য করেছেন। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও তদন্ত কমিটির প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সমন্বয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সামাধান হয়ে গেছে। এনিয়ে আর কথা বলার সুযোগ নেই। এ সময় তদন্ত প্রতিবেদনে কি বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০১৪ সালে অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান অনিয়মনের মাধ্যমে নিজের তত্ত্বাবধায়নে একজন পিএইচডি ছাত্রকে ভর্তি করান। ঘটনাটি দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ এ অনিয়মের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে বিবৃতি নেয়। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সমন্বয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলে তদন্ত শুরু হয়।
কিন্তু র্দীঘ সময়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অধ্যাপক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে ফের অভিযোগ উঠে। এ সময় সভায় উপস্থিত একাধিক শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করলেও উপাচার্য লুৎফুল হক কাউকে কথা বলতে না দিয়ে বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে বলে জানান। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কি বলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি সভায় উপস্থিত কাউকে কিছু জানাননি বলেও অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের নেতাদের অভিযোগ, ২০১৪ সালে সাইদুর রহমান পিএইচডির তত্ত্ববধায়ক হলেও তিনি নিজেই ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পিএইচডির ছাত্র ছিলেন। ফলে নিজেই পিএইচডির ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি নিজের তত্ত্ববধায়নে অন্য ছাত্রদের পিএইচডি করিয়েছেন।
শিক্ষকরা আরও জানান, অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত হাজী দানেশ কৃষি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি বাকৃবির শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে ২০১৪ সালে নিজের তত্ত্ববধায়নে পিএইচডি ছাত্র ভর্তি করেন।
অথচ নিয়ম অনুযায়ী কোন শিক্ষক পিএইচডি ছাত্রের তত্ত্ববধায়ক হওয়ার আগে কমপক্ষে দশজন ছাত্রের এম.এস (মাস্ট্রার্স) তত্ত্বাবধায়ক হতে হয়। এছাড়া ১৫ টি গবেষণা প্রবন্ধের পাশাপাশি ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।
সেই সাথে তত্ত্ববধায়ক হতে হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা মোট সময়ের অর্ধেক সময় হিসাবে গন্য হয়। সে নিয়মে সাইদুর রহমানের হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজের চার বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ২ বছর যোগ হবে। এতে সাইদূর রহমানের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা হয় মোট ১৬ বছর। যা যোগ্যতার মানদন্ডের চেয়ে কম।
এবিষয়ে জানতে একাধিবার যোগাযোগ করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুৎফুল হক বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, তত্ত্ববধায়ক হওয়ার সময় শিক্ষকতা ও গবেষণা মিলিয়ে আমার ২১ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা ছিল। তাছাড়া যোগ্যতার ভিত্তিতেই আবেদন করে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিয়ে আমি তত্ত্ববধায়ক হয়েছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপচার্য মহোদয় বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
এসএ/