ষড় ঋতুর বিভিন্ন মৌসুমের ফলের উপকারীতা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ষড় ঋতুর বিভিন্ন মৌসুমের ফলের উপকারীতা

আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে পাওয়া যায় নানান পুষ্টিকর ফল। এসব ফল আমাদের শরীরের পুষ্টিচাহিদা পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনই একটি ফল লিচু।

লিচু'র মূল উপাদান জলীয় অংশ অনেক বেশি থাকে। এর বাইরে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণে থাকে। ফ্যাট না থাকায় সবার জন্য উপকারি একটি ফল। কম ক্যালরি সম্পন্ন এই ফল সবাই খেতে পারে। তবে যাদের মিষ্টি খাওয়া কিছুটা ঝুঁকির অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগী, তাদের জন্য এই ফল কিছুটা কম খাওয়াই ভালো।

লিচুতে ভিটামিস-সি, ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এছড়া অন্যান্য খনিজ উপাদানগুলো হচ্ছে- আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদানগুলো যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এ কারণে দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা মেটাতে লিচু অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। তাই মৌসুমি ফলগুলো যতটা সম্ভব আমাদের জন্য খাওয়াটা খুবই উপকারি।

লিচুর উপকারিতা:- লিচু আমদের শরীরে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হলে সব ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া লিচুতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলা আমাদের রক্তের শ্রেতকণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

* লিচু শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করতের সহায়তা করে। রক্তের পরিসঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

* লিচু শরীরে ওজন কমাতে যথেষ্ট সহায়তা করে। লিচুতে থাকা খাদ্য-আঁশ খাদ্যের পরিপাক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া এই খাদ্য-আঁশগুলো দেহের ভেতর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে।

* লিচুর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে- এটি ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। লিচুতে থাকা ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

* এছাড়া লিচু আমাদের হজমে সহায়তা করে। তবে পরিমাণে বেশি খেলে এটি আমাদের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

* লিচু রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। লিচু অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধে সহায়তা করে।

আম: আমের নাম শুনেই জিবে জল আসে না এমন মানুষের দেখা পাওয়া খুব কঠিন। ফলটি শুধু স্বাদে নয়, গুণেও অনন্য। পাকা আম ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল। ১০০ গ্রাম আমে ১০০০ থেকে ১৫০০ আইইউ ভিটামিন ‘এ’ থাকে। এ ছাড়া আমে ভিটামিন বি ও সি, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম থাকে। চোখের নানা রোগ, চুলপড়া, খসখসে চামড়া, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে পারে আম।

জাম: রোগ নিরাময়ে জামের ভেষজ গুণ অনেক। শুধু এর নরম মাংসই নয়, এর বীজও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আনারস: সুস্বাদু ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল হলো আনারস। সর্দি-কাশিতে আনারস খেলে কাজে দেয়। কৃমি সারাতেও এটি কার্যকর।

তরমুজ: তরমুজ আমাদের দেশের অতি পরিচিত এবং সবার প্রিয় ফল। এটি এখন প্রায় সব সময়ই পাওয়া যায়। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পানি। অতিরিক্ত ঘাম এবং তৃষ্ণা দূর করতে তরমুজের রস খুবই কার্যকর। কাজের কারণে ক্লান্তি যতই আসুক তরমুজের রস খেলে অল্প সময়েই ক্লান্তি দূর হয়। তরমুজের বীজ বেটে ঠান্ডা পানিতে চিনিসহ মিশিয়ে খেলে যকৃৎ পরিষ্কার থাকে।

পেঁপে: পেঁপে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপেতে আছে প্যাপাইন। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পাকা পেঁপে খুব কার্যকর। কাঁচা পেঁপে ডায়রিয়া ও জন্ডিসে সারায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে জুস করে খাওয়া যায়।

শসা: গরমে প্রশান্তি দেয় শসা। গরমে শরীরে যে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়, তা শসার মাধ্যমে অনেকটা পূরণ করা যায়। শসা ত্বকের জন্য ভালো।

লেবু: পেট ফাঁপা, পেটের সমস্যা, ঠান্ডা, সর্দি-কাশিতে লেবু খুবই উপকারী। লেবুতে আছে ভিটামিন সি। জ্বর ও মুখের ঘা দূর করতে লেবুর ভূমিকা অনন্য।

কাঁঠাল: কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। পাকা কাঁঠালের ক্যালরি মূল্য প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি। মোট খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯। কাঁচা কাঁঠালে আঁশের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই।

পানিফল: পানিফল আরেকটি পুষ্টিকর ফল। এতে শতকরা ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে শ্বেতসার, খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। ক্যালরিও অনেক এই ফলটিতে।

কলা: কলা প্রায় সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা অবশ্যই থাকা উচিত।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর স্বনামধন্য চিকিৎসক,  আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হারুন আল মাকসুদ মহোদয় বলেন, মানুষ ফরমালিনের ভয়ে ফল খেতে চায় না। ফলের খোসা ফেলে দিলে ও পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এ থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব।

লেখক : ডাঃহারুন আল মাকসুদ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফুটবল, ময়মনসিংহ।

এসএ/