অস্বস্তির রোদেই এনেছে স্বস্তি, চলছে ধান শুকানোর ধুম
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রখর অস্বস্তির রোদেই এনেছে চাতাল কন্যাদের স্বস্তি, চলছে ধান শুকানোর ধুম। প্রখর রোদেও ক্লান্তি নেই বরং ধান শুকাতে পেরে মুখ স্বাস্তির হাসি।
শুক্রবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ফুলবাড়ী পৌরসভার পশ্চিম গৌরীপাড়া চম্পার শ্রী শংকর মেজর মিল চাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন চাতাল নারী শ্রমিক প্রখর অস্বস্তিকর রোদের মধ্যেই ধান শুকানো এবং বস্তায় ভরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
চাতাল কন্যা নামে খ্যাত এসব নারী চাতাল শ্রমিকদের মধ্যে স্বামী পরিত্যক্তা সখিনা বানু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিলচাতালে কাজ বন্ধ থাকায় খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে। এখন নতুন ধান ওঠায় কর্ম ফিরে এসেছে। প্রতিদিন হাজিরা পাচ্ছে আড়াই’শ টাকা।
অনিতা রানী বলেন, দীর্ঘদিন বেকার হয়ে বাড়ীতে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। রোদের কষ্ট হলেও কাজের মধ্যেই আনন্দ পাচ্ছি। এতে বাড়ীর বাচ্চাদের পেটের নিশ্চয়তা থাকছে। এই কষ্ট যেন প্রশান্তির।
একই চাতালের ধান শুকাচ্ছিলেন একই এলাকার মো. ফরহাদ হোসেন নামের চাতাল ব্যবসায়ী। বৃষ্টির কারণে হাউজে ভেজানো ধান নষ্ট হয়েছে। তবে গত দু’দিন থেকে প্রখর রোদের কারণে সবগুলো ভেজা ধানই এখন শুকানো সম্ভব হচ্ছে। এজন্য তিনজন নারী শ্রমিক কাজ করছেন।
অপর মিল-চাতাল ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মহসিন আলী বলেন, রোদের কারণে হাউজে ভিজে থাকা ধানগুলো রক্ষা পেয়েছে। আরও দু-একদিন বৃষ্টি হলে প্রায় দু’লাখ টাকার ধান নষ্ট হয়ে যেতো। ভেজানো ধানগুলো শুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য চাতালে ৯ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সব এলাকারই কৃষকরা বোরো ধান কাটার পরপরই দ্রুত শুকিয়ে বাড়ীতে নিতে ব্যবহার করছেন সড়ক, মহাসড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ খেলার মাঠ। ক্ষেতের ধান দ্রুত কেটে শুকিয়ে বাড়ীর গোলায় তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার কৃষকরা।
প্রচ- রোদেও নেই তাদের কোনো ক্লান্তি। বরং ধান শুকাতে পেরে স্বস্তির হাসি দেখা দিয়েছে কৃষাণ-কৃষাণীর চোখে-মুখে। ধান ও খড় শুকানোর কাজে প্রচ- ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। বাদ যায়নি ছোট-বড় ছেলে-মেয়েরাও। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন তারা। দ্রুত ধান শুকাতে মাঠের ঘাসের উপর বিছানো হয়েছে ছোট-বড় নাইলন সুতার তৈরি নেট। আর সেই নেটেই শুকানো হচ্ছে ধান। কেউ ধান উল্টিয়ে দিচ্ছেন। কেউ ধানের আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। অবসর নেই কারো। অস্বস্তির রোদেই যেন তাদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলার পৌর এলাকাসহ ৭ ইউনিয়ন এবারে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর এবং তা অর্জিতও হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল ও কৃষি বিভাগের তদারকির কারণে এবারে বোরো ধানের বা¤পার ফলন হয়েছে। তবে ১৫ থেকে ২০ ভাগের ধান এখনও কাটা হয়নি। সেগুলো জমিতে পানিতে পড়ে আছে।’
এসএ/