শিক্ষার্থীদের নতুন সম্ভাবনা অনলাইনে বিক্রি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


শিক্ষার্থীদের নতুন সম্ভাবনা অনলাইনে বিক্রি

বাড়িতে কতটা সময় আর অলসভাবে বসে থাকা সম্ভব? যখন পড়াশোনা শেষ করে বাসায় বেকার বসে থাকা লাগে কিংবা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলার চেষ্টা থেকেই মুলত বিভিন্ন ব্যবসায় নেমে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। নিজেদের হাত খরচের পাশাপাশি পরিবারেরও হাল ধরছেন তারা। ইতোমধ্যে আমের ব্যবসা শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী। আমের মৌসুম হওয়ায় জমে উঠতে শুরু করেছে তাদের ব্যবসা। সাপাহারের বিভিন্ন বাগান থেকে সংগ্রহ করে আবার অনেকে পুজি খাটিয়ে নিজেই গড়ে তুলেছেন আম বাগান। এই তরুণদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নওগাঁর সাপাহারের সু-মিষ্ট আম।

তরুণ উদ্যোক্তা মো. তৌহিদ জামান বলেন, ‍“আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্স শেষ করেছি। এখন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাসাতেই বসেছিলাম, অবসর সময় কাটছিল না। তাই চিন্তা করি নিজের কিছু করা দরকার। ভাবলাম যেহেতু নিজরে বাগান আছে সেগুলো অনলাইনে বিক্রি করবো আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্রেতারা বাজার থেকে যে আমগুলো কিনে খান, সেগুলোতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও মেডিসিন দেওয়া থাকে। যার ফলে ক্রেতারা ভালো মানের আম খেতে পান না সেই চিন্তা থেকে সরাসরি বাগান থেকে ফ্রেশ আম সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু করি করোনার সময় বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি, এখন তো করোনার প্রকোপ কেটে গেছে তাই আশা করছি এবছর আরও ভালো সাড়া পাবো।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যূরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ/ পর্যটন এবং আথিতেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নুর আজিম বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে আম নিয়ে কাজ করছি। আমার ফেসবুক পেজ ‘নুর ম্যাংগো ওয়াল্ড’ এর মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি। বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি, প্রতিনিয়ত আমের অর্ডার আসছে। বাগান থেকে আম সংগ্রহ, ক্যারেটে ভরা, কুরিয়ার সার্ভিসে পৌঁছে দেয়াসহ সকল কাজই করে থাকি নিজস্ব তদারকিতে।”

“সাপাহারের আম” ফেসবুকে পেজ ও ওয়েবসাইটের কর্ণধার এবং বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থী সৈয়ব আক্তার বলেন, “প্রথমে ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে আমের ছবি পোস্ট করে প্রচারণা চালাই। এবার পেজের পাশাপাশি ওয়েবসােইট খুলেছি। ক্রেতারা সেখান থেকে সব ধরনের তথ্য পেয়ে যাবে। মুলত ছবি দেখে ফেসবুকের মাসেঞ্জারে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করে আমের অর্ডার করেন ক্রেতারা। ব্যবসার প্রচার-প্রসার ও পলিসিগত বিষয় বলতে গিয়ে বলেন, আমি সর্বপ্রথম ক্রেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করে দামসহ যাবতীয় তথ্য দিয়ে থাকি। সব শুনে তারা যখন অর্ডার কনফার্ম করেন, তখন কুরিয়ার খরচ বা ক্ষেত্রবিশেষ অর্ধেক খরচ অগ্রিম নিয়ে নেই। তাদের অর্ডার অনুযায়ী আমের প্যাকেটজাত করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় সাপাহারের বাহারি জাতের আম। ক্রেতার সন্তুষ্টির মাধ্যমে নিজের সুনাম অর্জনটাই সবচেয়ে বড় কথা।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আরেক তরুণ উদ্যোক্তা এম এ নোমান বলেন, “প্রথমে আমি ‘আম বাজার’ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলি এবং প্রচারণা চালাতে শুরু করি। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও এখন বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে অনলাইনে আমের ব্যবসার জন্য প্রয়োজন সততার মাধ্যমে ক্রেতার আস্থা অর্জন করা। টানা কয়েক বছরের পরিশ্রমে আমি সেটি অর্জন করেছি। এখন ব্যবসা ভাল চলছে। প্রতি ক্যারেটে ২০/২৩ কেজি আম থাকে। মুলত বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পাঠানো হয়ে থাকে। মণপ্রতি আম পাঠানোর খরচ ৪০০/৫০০ টাকা পড়ে যা এই খরচও ক্রেতাদের। অনলাইনে আম পাঠালে মণপ্রতি ২০০/ ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।”

এছাড়াও সাপাহারের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারী- বেসরকারী চাকুরীজিবী, সাংবাদিক সহ এলাকার বেকারেরা যে যার মতো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে আমের ব্যবসা করে আসছেন।

নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৫ মে গুটি আম, ৩০ মে থেকে গোপালভোগ আম নামান চাষিরা। উন্নতজাতের মধ্যে হিমসাগর ৫ জুন থেকে নামানো শুরু হবে। এছাড়া নাক ফজলি ৮জুন, আম্রপালি ২৫ জুন থেকে নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সবশেষে আগামী ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা/ বারি-৪/ গৌড়মতি জাতের আম।

এসএ/