ভয় হয় প্রাণের আনোয়ারা কখন সীতাকুণ্ড হয়!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ভয় হয় প্রাণের আনোয়ারা কখন সীতাকুণ্ড হয়!

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জন এবং আহত হয়েছেন কয়েকশত। এ ঘটনায় লাশের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে। এ ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা নিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড, ইউনাইটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানা, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) কারখানাগুলোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো ও সচেতনতা সহিত কারখানা পরিচালনার দাবি তুলেছেন আনোয়ারার জনসাধারণ। বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় আনোয়ারার  জনসাধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

জানা গেছে, ২০১৬ সালে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি-১) সার কারখানায় একটি অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক ছিদ্র হয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে অন্তত ৫০ ফুট দূরে উড়ে গিয়ে পড়ে ট্যাংকটি। এতে নির্গত হয়ে যায় ট্যাংকের প্রায় ৪০০ টন অ্যামোনিয়া গ্যাস। ফলে আনোয়ারা উপজেলাসহ আশেপাশের পতেঙ্গা, হালিশহর, ইপিজেড, আগ্রাবাদ পর্যন্ত প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাতাসের সাথে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধযুক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস। এতে অ্যামোনিয়ার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ শ্বাসকষ্টে  হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আশেপাশের নদী, পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ও পশু-পাখিসহ মারা যায় বিপুল সংখ্যক প্রাণী। ক্ষতিগ্রস্ত হয় খেতের ফসল। বিবর্ণ হইয়া পড়ে গাছপালা ও লতাপতা। চলতি বছরের গত ২৪ এপ্রিল চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এর বর্জ্যের বিষাক্ত পানি পান করে ১৩ মহিষের মৃত্যুর ঘটে। এর আগে ১৪ এপ্রিল ৪ টি এবং সর্বশেষ ৬ মে ৮ টি মহিষের মৃত্যু ঘটে। এভাবে প্রতিবছর সিইউএফএল এর বর্জ্যের বিষাক্ত পানি খেয়ে অনেক গবাদিপশু মার যায়।

 আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ূম শাহ নিজের ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ কিন্তু আদৌ কি আমরা শিক্ষা নেবো। পশ্চিম আনোয়ারার জন্য অপেক্ষা করেছে ভয়াবহ ট্রাজেডি যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রাজেডি। দেশের উন্নয়নে প্রয়োজন কলকারখানা। এই সত্যটি অস্বীকার করার কোন কারণ নেই, কিন্তু সেই উন্নয়নের জন্য স্থাপিত মেগা কলকারখানাগুলো আসলেই কি সঠিক অথবা কঠোরতার মধ্যে কি মেইনটেইনেন্স হয়। পশ্চিম আনোয়ারায় স্থাপিত দেশের সবচেয়ে মাদার ফ্যাক্টরী সিইউএফএল, ড্যাপ, কাফকো। বেশ কয়েক বৎসর পূর্বে ড্যাপ এর একটি ছোট প্ল্যান্ট বাষ্ট হয়ে ১ কিলোমিটার এলাকা বিষাক্ত গ্যাস এ ছেয়ে যাই। মানুষ শ্বাস নিতে কষ্ট হয়েছিলো এবং পুকুরের প্রজেক্টের সব মাছ মরেই সাদা হয়েছিলো। চারপাশের গাছগুলো জ্বলে কালো ও ধুসর বর্ণ ধারণ করে। প্রতি বৎসর সিইউএফএল থেকে বিষাক্ত পানি উম্মুক্ত জলাশয়ে মিশে মাছের প্রজনন স্থান মরে গেছে। গৃহপালিত পশু পালন এখন যেন স্বপ্নের ব্যাপার। প্রতি বৎসর বিষাক্ত পানি খেয়ে শত শত গবাদি পশু মরে যাচ্ছে। এখন আর কেউ নতুন করে খামারি হতে চাই না। যা আছে তা দিন দিন কমতেই আছে। আগামী ০৭/০৮ বৎসরের মধ্যে আর কোন খামারী থাকবে না তা হলফ করে বলতে পারি। ড্যাপ এর আদলে সিইউএফএল কিংবা কাফকো একবার যদি আল্লাহ না করুন বিস্ফোরিত হয় তাহলে ভেবে দেখুন গাঁ শিউরে উঠবে। চোখ বন্ধ হয়ে আসবে লোম খাঁড়া হয়ে যাবে। সিইউএফএল চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর আছে ইট ভাটাগুলোর ব্যাপারে উনারা যতো বেশী হাঁকডাক করেন দেখান এই ফ্যাক্টরীগুলোর বিষয়ে পুরোটাই বিপরিত চিত্র দেখা যায়। সিইউএফএল ও ড্যাপ এর বর্জ্যে বিষাক্ত পানিতে গবাদি পশু মরে খামারিদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে ও পরিবেশ অধিদপ্তর এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতার সহিত নীরব। তাই এখনই যদি এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতার সহিত ফ্যাক্টরীগুলোকে নজরদারীর মধ্যে না আনে। যে কোন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী উদ্যোগ না নিলে যে কোন মুহুর্তে হার মানাবে সীতাকুন্ড ট্রাজেডিকে। তিনি কারখানাগুলো ফিটনেস ও পরিচালনায় নজরদারী রেখে যে কোন ট্রাজেডি রোধে শক্ত হাতে কঠোর ভূমিকা পালন করার আহবান জানান। 

আনোয়ারার জনসাধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সীতাকুন্ডের ট্রাজেডিকে উল্লেখ করে লিখেন, ভয় হয় প্রাণের আনোয়ারা কখন সীতাকুণ্ড হয়! আমরা আর লাশ দেখতে চাইনা, চাইনা শত মায়ের বুক খালি হোক। চাইনা সদ্য শিশু জম্মের পর বাবা ছেলের মুখ না দেখুক।  বিস্ফোরণ হওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চাইনা, আমরা চাই দূর্ঘটনা ঘটার আগে আপনারা পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। নয়তো আবার আমাদের লাশের মিছিল দেখতে হবে। সিইউএফএল, ড্যাপ-১, ড্যাপ-২ ও কাফকো সহ আনোয়ারায় অবস্থিত সকল কারখানাগুলোকে নজরদারীর মধ্যে এনে যে কোন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। এবং এ বিষয়ে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর  সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আনোয়ারার জনসাধারণ। 

নিরাপত্তার বিষয়ে আনোয়ারায় অবস্থিত কারখানারগুলোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জনবাণীকে বলেন, ‍“কারখানার নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খুবই সচেতন রয়েছি।”

এসএ/