ফসল পরিবহনের অজুহাতে অবৈধ বালু উত্তোলনের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মপুত্রে রাস্তা তৈরি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ফসল পরিবহনের অজুহাতে অবৈধ বালু উত্তোলনের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মপুত্রে রাস্তা তৈরি

রৌমারী প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী খেয়াঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ২০০ মিটারের একটি বালুর রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ী ও ট্রাক্টর (কাঁকড়া গাড়ি) মালিকরা যৌথভাবে নিজেদের খরচে এই রাস্তা নির্মাণ করছেন। নদ থেকে বালু বিক্রি সহজ করতে এই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কর্তিমারী ঘাটের ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ স্থানীয়দের। 

তবে অভিযুক্তদের দাবি, চরের ফসল পারাপারের জন্যই রাস্তাটি নির্মাণ করছেন তারা।

কর্তিমারী খেয়াঘাটের ইজারাদার ও যাদুরচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি অভিযোগ করেন, যাদুরচর ইউনিয়ন ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানসহ ৪০টি ট্রাক্টরের মালিক নিজেদের অর্থ খরচ করে ব্রহ্মপুত্র নদে রাস্তাটি নির্মাণ করছেন। বালুখেকোরা নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর নদের তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদে বিলীন হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে একই কায়দায় বালুখেকো চক্রটি ব্রহ্মপুত্র নদের একই জায়গা থেকেবালু উত্তোলন করে বিক্রির জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করে। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। পরে বন্যার সময় রাস্তাটি ভেঙে গেছে।

ঘাট ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কর্তিমারী খেয়াঘাটটি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। ঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে রাস্তাটি নির্মাণ করায় খেয়ানৌকা চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী খেয়াঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে একটি রাস্তা নির্মাণকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্রাক্টর মালিক-শ্রমিকরা। কয়েকটি ট্র্রক্টর দিয়ে চর থেকে বালু এনে ফেলা হচ্ছে নদের পানিতে। নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তা। পাশেই চলছে খেয়া পারাপারের নৌকা।

নাম প্রোকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রতি বছর নদের বুক থেকে ট্রাক্টর ও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বন্যার সময় এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে নদের তীরের দেড় শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া নদের ভাঙনে বেড়িবাঁধের (চাক্তাবাড়ি-ধনারচর-রাজিবপুর বেড়িবাঁধ) একাংশ ও মসজিদসহ কয়েকশ হেক্টর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা।

ব্রহ্মপুত্র বুকে রাস্তা নির্মাণের কথা স্বীকার করেছেন রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আমাদের দিগলাপাড়ার সব জমিজমা চরে। আমরা যেমন বালু আনব (উত্তোলন), তেমনি আমাদের ফসলাদিও আনা দরকার। এজন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা নিজেদের অর্থেই নির্মাণ করা হচ্ছে।'

বালু উত্তোলনই মূল উদ্দেশ্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম দাপটের সঙ্গে বলেন, 'হ্যাঁ, বালু তো কাটবই। এটা আমাদের ব্যবসা।'

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান জনবাণীকে বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখতে ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে।

এসএ/