এক বাগানেই দেশি-বিদেশি ৯০ প্রজাতির আম


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


এক বাগানেই দেশি-বিদেশি ৯০ প্রজাতির আম

ফেনীর সোনাগাজীতে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি আম বাগানে চাষ হয়েছে প্রায় ৯০ প্রজাতির আম। ফেনী নদীর তীরবর্তী মুহুরী সেচ প্রকল্পের এলাকায় সোনাগাজী অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে প্রায় ৬ হাজার এই আমের বাগানটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও স্থানীয় সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা মো:সোলায়মান।

শুধু আমের মৌসুম নয়, সারাবছর (বারোমাসি) আম সহ হরেক রকমের ফল উৎপাদন হয়ে থাকে সোলায়মানের এই বাগানে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসে সোলাইমানের এই বাগানটি একনজর দেখতে এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আম কিনতে। গাছে গাছে ঝুলতে দেখা যাচ্ছে হরেক রকমের বাহারি আম। কিছু আম পাক ধরেছে, কিছু আম অপরিপক্ক আবার কিছু আম রয়েছে বারোমাসি। পুরো বাগানটাই যেন আমের রাজ্য।আমের ঘ্রাণে মাতোয়ারা বাগানটির চারপাশ। সাধারণ জাতের আম গুলো একশত টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়ে থাকে। ব্যানানা সহ কয়েকটি জাতের আম বিক্রি হয়ে থাকে দুইশত টাকায়। প্রতি বছর এই বাগান থেকে গড়ে ৪০-৫০ টন আম উৎপাদন হয়ে যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৫-৬০ লক্ষ টাকা।

জানা যায় ১৯৮৬ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে যান মেজর সোলায়মান। এর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আম, মৎস চাষ, গবাদিপশু পালন, মধু, সরিষা উৎপাদন ও নার্সারি তৈরির বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে ১৯৯২ সালে তিন লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে পারিবারিক জমিতে খামার প্রতিষ্ঠা করেন মেজর সোলায়মান। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে এসে কৃষিতে নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে দারুণ ভাবে সফল হয়েছেন।তিনি নিজে শ্রমিকদের সঙ্গে বাগান ও খামার পরিচর্যার কাজ করেন বলে বৃদ্ধ বয়সে ও সুস্থ আছেন। 

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ সহ দেশের সব অঞ্চলের আম রয়েছে এই বাগানে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ভুটান ও চীন সহ বিদেশি বাহারি নানান স্বাদের আমও পাওয়া যায় এই বাগানে। সব মিলিয়ে এই বাগানে প্রায় ৯০ জাতের আম উৎপাদন হয়ে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে মো:সোলায়মান জনবাণীকে জানান, ৬৫ একরের সমন্বিত খামারের প্রায় ১৫ একর জমিতে রয়েছে নানান প্রজাতির আম গাছ। এর মধ্যে ৪ একর জমিতে শুধুই আম বাগান। বাকি আমগাছ গুলো লাগানো হয়েছে পুকুরের পাড়ে।চলতি মৌসুমে এই বাগান থেকে ৪০ টন আম উৎপানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারনে ফলন কম হওয়ায় এখন তা ধরা হয়ে ৩০ টন। এছাড়াও বাগানের পাশে স্থাপিত ইটভাটার কারনে ফলনে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।এই ক্ষতির বিষয় তিনি ফল বিজ্ঞানী ড.শরফউদ্দিন ও কৃষিবিদ ড.শাহীনুরের পরামর্শ নিয়েছেন। কৃষিতে সময় দিলে কৃষি ভালো ফল দেয় এমনটাই  দাবি তার।

তিনি জানান, এই বাগানে রয়েছে আম্রপলি, মধুরানী, হাঁড়িভাঙ্গা, মরিয়ম, কাঁচামিঠা, বারি-১-১১ কিউজাই, রেড পালমার, রেড তাইওয়ান, হানিডিও, আলপানিসো নামডগমাই, বারোমাসি কাটিমন, বাধাসুন্দরী, তোতাপুরি, দোসারি, ল্যাংড়া, হিমসাগর, সুর্যডিম, থাইল্যন্ডের আম চিয়াংমাই, গৌরমতি, ক্যান্ট, অস্ট্রেলিয়ান আম উসাইদ, থাই জাম্বুরা, ব্যানানা, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, রুপালি, তোলাপুলি, লুবনা, লক্ষনভোগ, শ্রাবণী, সুবর্ণরেখা ইত্যাদি জাতের আম।

খামারের মালিক সোলায়মান বলেন, ‍“এসব আম বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়না। খামারে এসেই ক্রেতারা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু ক্রেতা রয়েছেন যারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম সংগ্রহ করেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়ে অর্ডার করা আম গুলো।”

সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা আরো জানান, “বাগানে কোন প্রকার কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়না।”

এসএ/