বিশ্বের বুকে পদ্মা সেতু!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিশ্বের বুকে পদ্মা সেতু!

বল বীর- বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি, নত- শির ওই শিখর হিমাদ্রি!
১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন দেশের সৃষ্টি হয়। সুখ, শান্তি ত্যাগ করে দুঃখ, বেদনা'কে নিজের মনে পুষে রেখে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো পরিচিত হয়েছিল। তারিই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে পরিচিত করে দিল ‘পদ্মা সেতু’ তৈরির মাধ্যমে। 

পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, একটি স্বাধীন দেশের স্বনির্ভরতার চ্যালেঞ্জ। এ সেতু নির্মাণের সময়, অর্থ, ব্যয় ইত্যাদি নিয়ে অনেক কুচক্রমহল সমালোচনা করেছিল। যা বাস্তবায়ন তথা সেতু স্থাপন করার মধ্য দিয়ে সব জল্পনা- কল্পনা, গুজব- ম্লান মাটিতে মিশে গেল। পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। 

পঁচিশে জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে শেষ পর্যন্ত বাঙালির স্বপ্নের সেতু পদ্মা চালু হতে যাচ্ছে। এটি কোনো সাধারণ নিছক স্টিলের কাঠামো নয়, পদ্মা সেতু আমাদের ভালোবাসা, আবেগের নাম। জাতীয় অহংকার ও সাহসের আরেক নাম। সাফল্যের প্রতীক। আমাদের অর্থনেতিক মুক্তির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল মাইলফলক। অধীর আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ দুই নয়ন ভরে আমাদের আত্মশক্তির এ প্রতীকটি দেখছে। হঠাৎ বিশ্ব্যাপী করোনা সংকট দেখা না দিলে আরও আগেই ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু চালু হয়ে যেত। শুরু থেকেই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর কাজটি এগিয়েছে। 

রাজনৈতিক, কারিগরি ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ মেগা প্রকল্পটি আমাদের অর্থনেতিক মুক্তির এক অন্যন প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশ তার জনগণের সার্বিক অংশগ্রহনের মাধ্যমে নিজের অর্থে এমন একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প সম্পন্ন করার যে সাহস দেখিয়েছে, এর পেছনে নিশ্চয়ই একটি সাহসী মন আছে। আর প্রতিকূলতা জয় করে সফল হওয়ার এ রীতি জাতির পিতাই আমাদের শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন লক্ষ্যে স্থির থেকেই তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন স্বদেশের স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ে তার উন্নয়নের জন্য। শূন্যহাতেই তিনি মূলত মানুষের অজেয় প্রাণশক্তিকে পুঁজি করেই স্বদেশকে সোনার বাংলায় রুপান্তরের যোদ্ধে নেমে পড়েছিলেন। সেই সংগ্রামী মননের স্বাভাবিক বিস্তার আমরা তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখে দুর্বার গতিতে স্বদেশ গড়ার এক অসামান্য লড়াইয়ে নেমেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সকলকে মানতেই হবে, পদ্মা সেতু সাহসীর নেতৃত্বের এক কালজয়ীপরস্পরার সফলতা। বিশালত্বের দিক থেকে অর্থায়ন ও কর্মসম্পাদন যে এককভাবে সম্পন্ন করা যায়, তা এতদিন ছিল ভাবনার অতীত। 

আজ তা বর্তমান ও বাস্তবিক। এ সেতু আমারদের সেতু। বাংলাদেশের সকল জনগন এ সেতুর মালিক। কারণ এর অর্থায়ন করেছে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। সুতরাং এ সেতু বাস্তবায়নে সক্ষমতা এবং স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জের মধ্যকার যে মজবুত সেতুবন্ধ রচিত হয়েছে তার গৌরব ও মালিকানা নিতান্তই এ দেশের মানুষের। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য বিশ্বব্যাংকের মতো প্রকা- প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করে, তাদের সব দাবি অগ্রাহ্য ও পরাজিত করে বাংলাদেশের মান সমুন্নত ও উচ্চাসীন করার অনন্য কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ চুক্তি বাতিল করে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়চিত্তে ২০১৩ সালের মে মাসে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সংকল্প ব্যক্ত করেছিলেন। 

দেশবাসীও তার সঙ্গে একাত্মা হয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে এসেছে। অবশেষে সবার সম্মিলিত প্রয়াসে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী পদ্মার ওপর নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক ও রেল সেতু দেশের প্রধানতম এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সেতু। এ সেতু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক বিস্ময়। বাংলাদেশের গৌরব। 
লেখক : সোহেল রানা (শাওন),সাহিত্যিক ও কলামিস্ট।

জি আই/