প্রেমিকাকে হাত-পায়ের রগ ও গলাকেটে হত্যা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


প্রেমিকাকে হাত-পায়ের রগ ও গলাকেটে হত্যা

ফেসবুকের প্রেমের পর শারীরিক সম্পর্ক। এরপর বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় প্রেমিকাকে হাত-পায়ের রগ ও গলাকাটা হত্যা। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। খুন হওয়া ওই নারীর নাম জান্নাতুল ফেরদাউস পাখি (৩২)। এ হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিসহ প্রেমিক শাহাদাত হোসেন জীবনকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়েছে।

রোববার (১৯ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম।

পুলিশ সুপার জানান, ‍“জান্নাতুল ফেরদাউসের ২০০৮ সালে প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে ৩ বছর সংসার করার পর স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ওই সংসারে তার একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের ৬ মাস পর সেখানেও দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়।”

তিনি জানান, “এ বছরের ২৯ মে জীবনের সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদাউসের ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে দুজনের মাঝেমধ্যে কথা হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে একবার দৈহিক সম্পর্কও হয়েছে। প্রেমিক জীবনও বিবাহিত ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস কিছুই জানত না। পরবর্তীতে জীবন বিবাহিত জেনে, তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় জান্নাতুল ফেরদাউস। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা -কাটাকাটি ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) পরস্পর যোগাযোগ করে সোনাইমুড়ীর দেউটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ির সংলগ্ন নির্জন স্থানে যায়। সেখানেও উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জীবন তার কাছে থাকা ছুরি বের করে জান্নাতুল ফেরদাউসের গলাকেটে দেয়। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জীবন জান্নাতুল ফেরদাউসকে জবাই করে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়।”

রোববার (১৯ জুন) সকালে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের একটি সবজিখেত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, মোবাইল ও ওড়না উদ্ধার করে। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ি থেকে পরকীয়া প্রেমিক জীবনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক।

গ্রেপ্তারকৃত শাহাদাত হোসেন জীবন (২৪) উপজেলার পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক শামছুল আলম দিলসাদের ছেলে।

সোনাইমুড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাইমুড়ী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম দেওটি ইউনিয়নের বাসিন্দা নূরনবি, স্বপন ও সেনবাগ উপজেলার মনির ও আবু সুফিয়ানকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতম্বপুর গ্রামের দিলসাদের ছেলে ও নিহত নারীর পরকীয়া প্রেমিক জীবনকে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আটক করা হয়। পরে তার জবানবন্দির ভিত্তিতে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয় “

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভিকটিম জান্নাতুল ফেরদাউস তার বড় বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বের হন। এরপর রাত ৮টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্নস্থানে খোঁজ করেও তাকে পায়নি। পরে বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি সবজিখেত থেকে তার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এসএ/